সাবধানতা ও সচেতনতাই পরিত্রাণের মূলমন্ত্র

অনয় মুখার্জী
Published : 18 Jan 2012, 05:19 PM
Updated : 3 June 2020, 10:56 AM

ঋষি অরবিন্দ বলেছিলেন, "ঊষার অব্যাবহতি পূর্বেই রাত্রি সর্বাপেক্ষা নিকষ আঁধার হয়"। এই কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনই সত্য "রাত যত গভীর হয় প্রভাতের আলো ফোটার সময় এগিয়ে আসে"। চলমান সময় করোনাময়, পৃথিবীর অন্ধকারছন্ন সময়। পৃথিবীর চিরচেনা রূপে এসেছে আমূল পরিবর্তন। দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা অভ্যাসগুলোতে আজ বড় পরিবর্তনের ডাক। অনেক প্রশ্নের উত্তর না মেলায়, অনেক আশঙ্কায় জীবন আমাদের বাধ্য করেছে অন্তরীণ হতে। বৈশ্বিক জীবন-যাপনে ইতোমধ্যে এসেছে অনেক পরিবর্তন, আগামীর জীবনচর্চায় আসবে স্থায়ী পরিবর্তন ইঙ্গিতও এমনই। তবে সবার মনে প্রশ্ন এখন একটাই, গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে নাকি ফিরবে আবারো স্বাভাবিক জীবন?

এমন পরিস্থিতিতে আগামীর পথ পাড়ি দিতে ও সুস্থ-সুন্দর জীবনচর্চার জন্য সচেতনতা এবং সাবধনতার বিকল্প নেই। গত দুইদিন আগে প্রবাসী বাংলাদেশি এক অগ্রজের সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি খুব খুশি মনে বললেন ইউরোপের অস্ট্রিয়াতে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক করা হয়েছে আগের মতো এবং তাতে কোনো সমস্যাও দেখা দেয়নি। কারণ তাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিক শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সবাই নিয়ম মেনে চলছে। সচেতনতা ও সাবধনতার দিয়েই জয় করেছে করোনাভাইরাসকে, সাথে সাথে জানছে ও মেনে চলছে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা যথাযথ ভাবে মেনে চলেছে। এবং এই সব প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা মেনে চলবার কারণেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে সেই দেশগুলো সংকটময় সময়।

রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের ওপর জনগণের আস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সত্যকথনের ওপর সেই আস্থা নির্ভর করে। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জনগণের সরকার প্রধান তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর তা অটুট রয়েছে। দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটির পর সল্প পরিসরে ৩১ মে কর্ম পরিচালনা করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে অনির্দিষ্টকাল মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়, জীবন-জীবিকার স্বার্থেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করতে হয়। যার কারণেই সরকার এই পথ বেছে নিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সময়েই শুধু নয় অতীতের যেকোনো দুর্যোগে আগলে রেখেছেন প্রিয় বাংলাদেশকে। ইতোমধ্যে ৬ কোটি মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছেন। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ১২৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। ধান কাটা-মাড়াইয়ে সহায়তার জন্য কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন্ড হারভেস্টর এবং রিপার সরবরাহে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষদের ১০ টাকা কেজি দরে ৯০ হাজার টন চাল দেওয়া ব্যবস্থা করেছেন। আরো অনেক অনেক পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। তিনি করেন, তিনি ভাবেন, এক কথায় তিনি পরিত্রাণ কর্তা। আত্মবিশ্বাস, আত্মত্যাগ এবং সঠিক সিদ্ধান্তের সমন্বয়ে তিনি পৌঁছেছেন শ্রেষ্ঠত্বে। এজন্যই তিনি আস্থা ও নির্ভরের একমাত্র আশ্রয়স্থল।

তবে শুধু সরকারের একক কর্মকাণ্ডে এই সংকট সমাধান হবার নয়, এর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি এবং জনসাধারণের সমন্বিত প্রয়াস। আবার রাতারাতি মানুষের মনোভঙ্গি বা অভ্যাসের পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু এই খারাপ সময়ে ঠিকমতো চলতে হলে বা নিরাপদ থাকতে হলে দ্রুততার সাথে পরিবর্তন আনতে হবে অনেক অভ্যাসের। সরকার কর্তৃক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা যথাযথ ভাবে মেনে চলতে হবে। নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে সচেতন করতে হবে। নিজের ইচ্ছা এবং চেষ্টাই পারে নিজেকে বাঁচাতে ও দেশ-জাতিকে রক্ষা করতে। এই ভাইরাস রুখবার একমাত্র উপায় সাবধনতা, সচেতনতা ও বিজ্ঞানসম্মত জীবনযাপন করা। সর্বশেষে মনে রাখতে হবে আমরাই পারি শুধু আমদের রক্ষা করতে।