খাদ্যমন্ত্রীর শাপলা-গোলাপ ফাঁস: পরীক্ষা বাতিল করা হোক

বাসন্ত বিষুব
Published : 27 Jan 2012, 09:00 AM
Updated : 27 Jan 2012, 09:00 AM

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে অবিরাম বলে বেড়াতো ঝুড়ির তলা তারা লাগিয়ে ফেলেছে, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। তাই যদি সত্য হয় তবে আমার মতে সে তলার নাম দেয়া যেতে পারে হাওয়া ভবন। কারণ সারা দেশ থেকে লুটের ও চুরির টাকা এসে জমা হতো এই হাওয়া ভবন নামক তলায়, তারপর সেখান থেকে বরপুত্রের দেশী-বিদেশী সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে। সে মতে বাংলাদেশ বর্তমানে তলাযুক্ত ঝুড়িই বটে তবে ঝুড়ি ভর্তি ফুটা। শুধু কী ঝুড়িতে ফুটা! মন্ত্রী-এমপিদের মুখ ফুটা, নেতা-নেত্রীদের নীতি ফুটা, জ্ঞানীদের বিবেক ফুটা আর এর ধারাবাহিকতায় ফুটা হয়ে গেছে পুরো প্রশাসন যন্ত্র। এই ফুটার প্রাচুর্যে পুরো বাংলাদেশটাই এখন অজস্র ফুটাযুক্ত ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। সেই ফুটা দিয়ে সময় সময় বের হয়ে আসে অনেক কিছুই।

বিডিনিউজ২৪.কম ও বাংলানিউজ২৪.কম জানিয়েছে: আজকে অনুষ্ঠিত সহকারী খাদ্য উপ-পরিদর্শক পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গত রাতেই ফাঁস হয়ে গেছে এবং সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই অনুষ্ঠিত হয়েছে নিয়োগ পরীক্ষা। আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া যেন একটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। প্রশাসনে একটি চক্র নিয়মিতভাবে ও নির্ভয়ে এই প্রশ্ন ফাঁস করার কর্মটি সম্পাদন করে আসছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এই চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু এবারের ঘটনায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে দমন করা সম্ভব হয়নি প্রশ্ন ফাঁসকারী ঐ চক্রকে। কয়েক মাস আগে বিজি প্রেসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হলেও তার কোন প্রভাব এই সংঘবদ্ধ চক্রের উপর পরেছে বলে মনে হয়না। উপরের দুটি সংবাদ মাধ্যমই জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। কেন?

সচিব কী এই ঘটনাটিকে সাংবাদিকদের বানানো ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করছেন নাকি এর সাথে তারও সংশ্লিষ্টতা আছে? ফুটা দিয়ে তার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরে কত পার্সেন্ট ঢুকেছে। নাকি তিনি বুঝাতে চাচ্ছেন যে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ফাঁস করে দিয়ে সাংবাদিকরা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চাইছে! আমলাদের তো আর দরদের অভাব হয়না। তাদের দিলে এতই দরদ যে সে দরদের ভারেই এক সময় সরকারকে নুয়ে পড়তে হয়; জনতার কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করতে হয়।

আজকের এই ঘটনা এমন এক মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের যার মুখে নীতি কথার অভাব নাই। কোথাও বক্তৃতা শুরু করলে এক ঘন্টার আগে তার কথা ফুরায় না। তিনি অতীত টানেন, বর্তমান টানেন এমনকি অলৌকিক ক্ষমতাবলে ভবিষ্যতও টানেন। তিনি এতোই নীতিবান হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন যে তার জেলার লোকেরাও বিরক্ত না হয়ে পারেনা। তাই খাদ্যমন্ত্রী জনাব আব্দুর রাজ্জাক ভোলা, মানে আমাদের ভোলা ভাইকে বলতে চাই, এইবার আপনার নীতি-আদর্শ খাটান তো দেখি। সচিবকে নির্দেশ দিন পরীক্ষা বাতিল করে দিতে। আর তাকে জিজ্ঞেস করুণ, তার প্রাপ্য অংকটা কত মোটা! তা না হলে বুঝবো, এ সবই আপনাদেরই কারসাজি। প্রশ্ন বেঁচেও কামাবেন আবার নিয়োগের জন্য অগ্রিম নিয়েও কামাবেন তা কী করে হয়। যে কোন একটা করুণ, তা না হলে দুটোই বাদ দিন। ভোটাভুটির দিন কিন্তু আবার আসিতেছে।