বিরোধী দলের এজেন্টের ভূমিকায় কামরুল-হানিফ!

বাসন্ত বিষুব
Published : 6 Feb 2012, 04:13 PM
Updated : 6 Feb 2012, 04:13 PM

মাত্র কয়েকদিন আগে সারা দেশে প্রচন্ড রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পালিত হলো বিরোধীদল বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচী। একটি গণমিছিল খুব আহামরি কিছু নয়। রাজপথে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মিছিল করে হেঁটে যাবে, রাস্তার দুপাশের জনতা তা হা করে চেয়ে দেখবে এবং পরদিন পত্রিকায় সে মিছিলের ছবি ছাপা হবে। একটি মিছিলের কর্মসূচী থেকে এরচেয়ে বেশিকিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে মনে হয়না। কিন্তু এই সাধারণ কর্মসূচী থেকে বিরোধী দল বিএনপি এত বেশি কিছু পেয়েছে যা তাদের কাছেও ছিল অপ্রত্যাশিত। যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। মিছিলের কর্মসূচী দিয়ে বিএনপি চেয়েছিল নেতকর্মীদের গা গরম রাখতে এবং জনগণকে আরো একবার তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে। কিন্তু এই গণমিছিল প্রতিহত করা ও রাজপথ দখলের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই সারা দেশে উত্তাপ ছড়িয়েছে এবং কর্মী ও পুলিশ বাহিনী রাস্তায় নামিয়ে বিরোধীদলকে পাঁচটি লাশ উপহার দিয়েছে। গণমিছিলের সাথে হরতালের সম্পর্ক নেই কিন্তু এই মিছিলকে উপলক্ষ করে রাজধানীতে হরতালের মত পরিবেশ বিরাজ করেছে এবং বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি পুরো জাতির দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। আর এই সবকিছু ঘটেছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভুলের পরিণতি হিসেবে। অর্থাৎ সরকার বিরোধী একটি সাধারণ গণমিছিলকে চূড়ান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলার জন্য সরকার নিজেই দায়ী।

আগামী ১২ মার্চ বিরোধী দলের বহুল আলোচিত 'ঢাকা চলো' কর্মসূচী হবার কথা রয়েছে। এদিন সারা দেশ থেকে কর্মী-সমর্থক জড়ো করে ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। বলার অপেক্ষা রাখেনা এটি একটি বৃহৎকর্মসূচী আর স্বভাবতই এ নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ গুরুত্বের সাথে। কেমন হতে পারে ঢাকা চলো কর্মসূচী? এই কর্মসূচী কী রাজধানী ঢাকাকে অচল করে দেবার মত কিছু হবে; এই কর্মসূচীর ফলে কী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগামী ১২ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে; নাকি একটি মহাসমাবেশের মধ্যে দিয়েই সমাপ্ত হবে এটি? বিরোধী দল বলছে, ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে তারা সরকারকে দেখাতে চায় যে তাদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন রয়েছে এবং এই কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশ ভিন্ন অন্য কিছু হবেনা। অর্থাৎ বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী ১২ মার্চ সরকার উৎখাতের কোন পরিকল্পনা তাদের নেই। আর শুধু পরিকল্পনার কথাই বলছি কেন, পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার মত কোন সামর্থ আদৌ কী বিএনপির আছে? পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে একদিনের একটি কর্মসূচীর মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান ঘটানো কী সম্ভব? সামান্য রাজনৈতিক সচেতনতা আছে এমন কোন ব্যক্তিই এর জবাবে হ্যাঁ বলবেন বলে মনে হয়না।

অথচ এই 'হ্যাঁ' জাতীয় কথাই বলে চলেছেন দেশের রাজনৈতিক উচ্চাসনে আসীন বর্তমান সরকারেরই কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আগামী ১২ মার্চ এই সরকারের জন্য কেয়ামতের দিন এবং যেকোন মূল্যে এই দিনের আগমনকে প্রতিহত করতে হবে। এই সব হাস্যকর ও আত্মঘাতি কথা যারা বলছেন তারা আর কেউ নন- আইনপ্রতিমন্ত্রি কামরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। এই দুইজনের বক্তব্যের শব্দচয়ন ও বাক্যসংগঠন দেখে দেশবাসী সত্যিই অভিভুত। তাদের বুঝতে বাকি নেই যে লেবু চিপে রস বের করতে এই দুই কর্তার হাত লাগে না, তাদের কথাই যথেষ্ট। অথচ লেবু বেশি চিপলে যে রস তেতো হয় সে কথা হয়তো তারা ভুলেই গেছেন।

এই দুই নেতা ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন যে, ১২ মার্চের আগেই তারা ঢাকার রাজপথ দখলে নেবেন এবং এমন কর্মসূচী দেবেন যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার সাহসই পাবেনা। জনাব হানিফ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ১২ তারিখে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা তারা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবেন। অর্থাৎ যে কথাটি বিরোধী দল নিজেও বলেনি সে কথাটিই প্রচার করে যাচ্ছেন জনাব হানিফ। ১২ মার্চকে স্বপ্রণোদিত হয়ে 'সরকার উৎখাত দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ভীত করে তুলছেন এবং এই ভীতি কাটাতে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে রাজপথে নেতাকর্মী নামিয়ে সংঘাতকে অনিবার্য করে তুলছেন। যে কাজ করার সামর্থ্য বিএনপির নেই সে কাজটাই করে দিচ্ছেন এই দুই নেতা। যেন বিরোধী দলের আদর্শ এজেন্ট। ঢাকা চলো কর্মসূচীতে সংঘাত-রক্তপাত ঘটিয়ে তারা চাইছেন সারা দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়–ক; তারা চাইছেন এই একদিনের কর্মসূচী পরিণত হোক লাগাতার গণআন্দোলনে। তারা হয়তো চাইছেন, এই লাগাতার গণআন্দোলন পরিণত হোক গণঅভ্যুত্থানে।

আর ঠিক এই কারণেই মনে করি, এই দুই ব্যক্তির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর আরো সতর্ক হওয়া উচিত। তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। বিরোধীদলের হাতে এর আগেও তারা যেভাবে ইস্যু তুলে দিয়েছে সেরকম ইস্যু তারা যেন আবার তুলে দিতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখাটাই জরুরী। তা না হলে গণমিছিলের মত এই ঢাকা চলো কর্মসূচীও হয়ে উঠতে পারে সরকারের জন্য বড় বিপদের কারণ। আমরা চাইনা সরকার এই মুহূর্তে অস্তিত্ব বিনষ্ট হবার মত কোন বিপদে পড়ুক।