খালাফ থেকে খালেদা: সরকারের চরম সতর্কতা প্রয়োজন

বাসন্ত বিষুব
Published : 9 March 2012, 05:27 PM
Updated : 9 March 2012, 05:27 PM

আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার বা সরকারের গুণধর মন্ত্রীরা যাই বলুক না কেন, দেশের এবং বিশেষকরে রাজধানী ঢাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এর আগে যা ঘটেনি হালে বাংলাদেশে তাই ঘটছে। গুলশানের মত এলিট অঞ্চলে যখন সৌদি আরবের মত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল রাষ্ট্রের কূটনৈতিক কর্মকর্তা আততায়ীর হাতে নিহত হন তখন অনেক তিক্ত ভাবনা মনে উদয় হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

নিহত সৌদি কর্মকর্তার পদমর্যাদা কতটুকু কিংবা তিনি আদৌ কূটনীতিক ছিলেন কিনা সে ভাবনা অবান্তর। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিহত ব্যক্তি সৌদি সরকারের একজন কর্মকর্তা এবং তিনি কূটনৈতিক কাজেই বাংলাদেশে নিয়োজিত ছিলেন- প্রমোদ ভ্রমন কিংবা ব্যক্তিগত কোন কাজে তিনি এদেশে অবস্থান করছিলেন না। আর এই ধরণের কোন ব্যক্তি যখন দায়িত্বপ্রাপ্ত অবস্থায় কোন 'ছকের' আওতায় নিহত হন তখন সেটা কোন তুচ্ছ ঘটনা থাকে না, তা আমাদের শিক্ষানবীশ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মন্ত্রণালয় যে বিবৃতিই দেক না কেন।

খালাককে কে বা কারা হত্যা করেছে এ নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নাজিল হয়ে গেছে। কেউ কেউ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারত কিংবা পাকিস্তানের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। উদ্দেশ্য- বাংলাদেশের উপর সৌদি সরকারকে ক্ষুব্ধ করে বাংলাদেশীদের শ্রমবাজার নষ্ট করা এবং সেই সুযোগে সে দেশে নিজেদের বাজার সৃষ্টি করা। নাজিলকৃত এই তত্ত্ব একেবারেই উড়িয়ে দেবার মত নয় বরং গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবি রাখে। কিন্তু যে কোন ধরণের তত্ত্বকে বিবেচনার আগে বিদ্যমান পরিস্থিকেও বিবেচনায় রাখা উচিত। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে ধরণের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে শ্রমবাজার দখলের উদ্দেশ্যের চাইতে এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষকরে, আজকের সৌদি গেজেট এই হামলার পেছনে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্তার ইঙ্গিত দেবার পর বিষয়টির আন্তর্জাতিক গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। এই সম্ভাবনার আলোকেই সৌদি সরকার বিশ্বজুড়ে তার কূটনীতিকদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ছাড়া জোব্বা পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। খালাকের হত্যাকাণ্ডকে সৌদি সরকার যে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এই নিষেধাজ্ঞাই তার প্রমাণ।

তাছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু নিয়ে সৌদি সরকারের ভূমিকায় স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি ক্ষুব্ধ হলেও লাভবান হয়েছে জামাতে ইসলামী। বলা চলে, সৌদি ভূমিকার কারণেই মনোবল অনেকাংশে বেড়ে গেছে জামাত নেতাকর্মীদের। তাই তাদের পক্ষে সৌদি সরকারের আরো জোড়ালো ভূমিকা তারা প্রত্যাশা করতেই পারে। আর এই ধরণের সমর্থনকে ত্বরান্বিত করার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই দলটি গ্রহণ করেছে নানা ধরণের কর্মসূচী। আর এ কারণেই খালাকের হত্যাকাণ্ডে সাথে জামাতের সম্পৃক্ততাও উড়িয়ে দেয়া যায়না। হতে পারে এই জঘন্য হত্যাকান্ডে জামাত একা জড়িত নয়। হতে পারে তাদের সাথে আন্তর্জাতিক কোন চক্রও জড়িত। হতে পারে সে চক্র পাকিস্তান বা ইরানের সমর্থনপুষ্ট।

বলা বাহুল্য, বিএনপিও সৌদি সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট একটি দল। আর বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বে সরকার বিরোধী যে আন্দোলন চলছে সে আন্দোলনে সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের সমর্থন আদায় করাও বিএনপি-জামাতের উদ্দেশ্য। তাই ১২ মার্চের মহাসমাবেশের মাত্র কয়েক দিন পূর্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করি। আমার ব্যক্তিগত আশঙ্কা, ১২ তারিখে বিএনপির মহাসমাবেশে নাশকতা সৃষ্টি করে কিংবা সরাসরি বেগম খালেদা জিয়াকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এই চক্র তাদের সেই স্বার্থসিদ্ধির প্রচেষ্টাকে আরো জোড়ালো করতে পারে। নাশকতার কারণে মহাসমাবেশ বানচাল হলে কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার উপর হামলা হলে সৌদি সরকারসহ মুসলিম বিশ্বের সরকারগুলো কঠোর অবস্থানে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আর সেই সম্ভাব্য অবস্থানের সুযোগই হয়তো নিতে চেষ্টা করছে সেই গুপ্ত চক্রটি।

আর এ কারণেই সরকারকে চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিকে শতভাগ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, ১২ তারিখের যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় প্রাথমিকভাবে সরকারের উপরই বর্তাবে। তাই এই দায় এড়ানো এবং যে কোন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করার স্বার্থে আমি মনে করি, ১২ তারিখে সরকারের পক্ষ থেকে চরম সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।