সংসদে মারামারি করার পূর্ণ অধিকার চাই

বাসন্ত বিষুব
Published : 19 March 2012, 05:41 PM
Updated : 19 March 2012, 05:41 PM

গতকাল এবং আজ সংবাদ মাধ্যমগুলোতে যে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে সেটা হলো সংসদে দুই নারী সদস্যের হাতাহাতির উপক্রম হওয়া ও বিরোধী দলের সদস্যদের অশালীন শব্দ চয়ন। সংবাদ মাধ্যমে সংসদের ভেতরের এই খবরগুলোর প্রচার অনেকটা চিরাচরিত কিন্তু সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করে দেখেছি তারা বিষয়টিকে নিয়েছে টক-ঝাল-মিষ্টি আচারের মত। আচার দেখলেই লোকের মুখে যেমন জল জমে তেমনি এই দুই নারী সংসদ সদস্যের আচরণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েও চায়ের দোকানে ভির করা মানুষের মুখেও জমে উঠেছিল টলটলে জল। লোকগুলো ছিল বেজায় খুশি; দীর্ঘ বাকযুদ্ধে উপভোগ করছিলেন পরম আমোদ। বাঙালী রমনীরা চুলাচুলিতে অভ্যস্থ আর পুরুষেরা সে দৃশ্যের বর্ণনা দিতে সিদ্ধহস্ত। বোধকরি এ কারণেই এই অবস্থা।

দীর্ঘ বিরতি দিয়ে বিরোধী দল বিএনপি তার মিত্রদের সহযোগে সংসদে হাজিরা দিয়েছেন; জাতিকে কৃতার্থ করেছেন। তাদের এই কালজয়ী ভূমিকার কারণে বাংলার আকাশে আজ নতুন সূর্যের উদয় ঘটেছে। গাছে গাছে পাখপাখালি কলরব করছে। জাতির দেহ-মনে প্রবাহিত হচ্ছে মৃদুমন্দ বায়ু। আর ওদিকে রক্ষা পেয়েছে তাদের চিরসবুজ আসন; রক্ষা পেয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্র। এ এক পরম পাওয়া। তাই আগামী ৮৯ সংসদীয় কার্যদিবস এর দুঃশ্চিন্তা থেকে তারা মুক্ত, এ কটা দিন আর না গেলেও চলবে। এজন্যই হয়তো বিরোধী দলের চিপ হুইপ (প্রধান চাবুক) ইতোমধ্যেই হুমকী দিয়েছেন কিংবা আভাস দিয়েছেন সংসদ বর্জনের। তবে এই পূর্বাভাস না দিলেও চলতো কারণ এই বঙ্গের লিকলিকে দেহের পাবলিক এ বিষয়ে এখন অনেক অভিজ্ঞ। তারা জানে কে, কবে, কোথায় যাবে এবং কেন যাবে। তারা যেমন যাত্রা-তিথির খবর জানে তেমনি জানে ফিরতি যাত্রার খবর।

কিন্তু আমার দৃষ্টিভঙ্গি খানিক ভিন্ন। ওই দুই মহীয়সী না থামলেই ভাল করতেন। খেলাঘরকে খেলা দিয়েই মাতিয়ে রাখা উচিত। খেলাঘর বিদ্যা-বুদ্ধি চর্চা করার জায়গা না। এর জন্য আরো অনেক জায়গা আছে। খেলাঘরে খেলা হবে এটাই আমাদের কাম্য। কেউ হাতাহাতি করবেন, কেউ চুলাচুলি করবেন আর কেউ বা করবেন বকাবকি। বাঙালী সংস্কৃতির পূর্ণ ব্যবহার করা প্রতিটি বাঙালীর অবশ্য কর্তব্য। প্রতিটি বাঙালীর দায়িত্ব তার আপন সংস্কৃতিকে রক্ষা করা। আর তাই আমার জোর দাবি, আগামীতে দেশের এই সর্ববৃহৎ খেলাঘরে আমরা চেয়ার চেবিল ছোঁড়াছুড়ি দেখতে চাই। দেখতে চাই, দেশসেরা সব খেলোয়ারদের ঘুষাঘুষি কিংবা মল্লযুদ্ধ। এর জন্য প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে বর্ম সরবরাহ করা যেতে পারে।

তাই বিরোধী দলের প্রধান চাবুক ও প্রধান ভাবুকের কাছে আমার আবেদন থাকবে, ফিরতি যাত্রার চিন্তা বাদ দিয়ে ওখানে মারামারি করুণ। এতে অন্তত জাতির চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা হবে। জানেন নিশ্চই: সুস্থ্য মন= সুস্থ্য দেহ= সুস্থ্য জাতি।

নোটাবিনি: বাংলাদেশের বৃহত্তম ও বিলাসবহুল খেলাঘর কোনটি? সঠিক উত্তর: জাতীয় সংসদ ভবন।