বাবু চলে গেলেন, তবে নিয়ে গেলেন সাধের নির্বাচনটা

বাসন্ত বিষুব
Published : 17 April 2012, 06:07 AM
Updated : 17 April 2012, 06:07 AM

এ এক মহাফ্যাসাদ। অংকটা সরল তবে উত্তরটা শূন্য। এতক্ষণ ভরে অংশ কষে যদি তার উত্তর হয় শূন্য তবে কেমন লাগে? আমার রাগ লাগে। আমি নিশ্চিত, এমন রাগ এখন আওয়ামী লীগেরও লাগছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়েছিল কিভাবে ঢাকার পিতার আসনটি পুনরুদ্ধার করা যায়। কারণ সরকারে থাকবো আমি আর রাজধানী হবে অন্যের তা হতে পারে না। চিন্তাটা সঠিক। ক্ষমতার মন্দিরে ফাঁক-ফোঁকরের কোন সুযোগ নেই, সবটুকুই নিরেট হওয়া চাই।

তো কি আর করা, নির্বাচন দাও খোকা বিদায় হয়ে যাক। তবে তাই হোক, বাজুক ভোটের বাঁশি। কিন্তু ফ্যাসাদ লেগে গেল অন্য জায়গায়। সময়টা ভাল না, গরমকাল। একে তো প্রকৃতির উৎপাত, তার উপর লোডশেডিং এর চোটপাট। এমন অসময়ে ভোটের বাঁশি বাজলে মূর্খ পাবলিকের সব রাগ গিয়ে পড়বে ভোটের বাক্সে। এতে বাক্স ভরবে বটে কিন্তু ভোট যাবে সব খোকার পাতে। সো, ওয়েট এন্ড সি।

কেউ একজন বুদ্ধি দিল, এত ওয়েট করলে চলবে কেমনে। বেলা যে বয়ে যায়। সুতরাং আগে খোকাকে ভাগাও, পরে তার ভাগ্যটাকে দুই টুকরা করে দাও। মন্দ কী, তবে তাই হোক। ভারত ভাগ হয়েছিল দ্বিজাতি তত্ত্বে আর ঢাকা ভাগ হলো খোকা তত্ত্বে। এইবার আর পায় কে? ঢাকা আমার। বাজলো বাঁশি, বাজলো ভোটের বাদ্যবাজনা।

কিন্তু সরল অংক বড্ড বেহায়া। পুরো পাতা নষ্ট করে ফল দেয় শূন্য। এজন্যই হবে হয়তো, ফ্যাসাদ বাজিয়ে দিলেন বাবু সেনগুপ্ত। পঞ্চাশ বছর রাজনীতি করেছেন, মুজিবের চামরা দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছেন কিন্তু ঘুষ খেতে শিখেন নাই। টাকার বস্তা নিয়ে ধরা খেলেন গভীর রাতে। তাও আবার পুলিশের হাতে নয়, সোজা বিডিআর এর ভূতের হাতে। বিডিআর এর ভুতের বাবা কিনা আবার সেনাপুত! তাই রক্ষা হলো না। আমগুলো সব গেল। ছালা বাঁচাতে বেশ লম্ফজম্ফ করলেন তিনি কিন্তু আজ সেটাও গেল। তাই বাক্যটাও পূর্ণ হলো। বাবু সেনগুপ্তের আম-ছালা দুটোই গেল।

তবে তিনি গেলেন বটে কিন্তু নিয়ে গেলেন সাধের নির্বাচনটাও। গরম গেল, শীত এল; খোকা গেল, ভোট এল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। সেনগুপ্তের কেলেঙ্কারী খেয়ে দিল পুরো সরল অংকটা। আগেই ধারণা করা হয়েছিল, এত কষ্টের পর অবশেষে যখন ঢাকার নির্বাচনের ঢাক বাজতে শুরু করলো ঠিক তখন বাবু সেনগুপ্তের এই কেলেঙ্কারী মাথায় নিয়ে সরকার রাজধানীর দখল নিতে যাবে না। তো কি আর করা। রিট করো। হুজুরকে বল ঝারফুক দিতে, আপাতত সব বন্ধ থাকুক। হুজুর ঝারফুক দিলেন। বাদ্যবাজনা তিন মাসের জন্য বন্ধ হল। আম-কাঁঠাল খেয়ে পাবলিক মাতাল হোক, বাবুকে ভুলে যাক তারপর দেখা যাবে। চিন্তা কিসে, পিতার আসনে তো আর খোকা নেই। তাই বিলম্বেও কোন সমস্যা নেই। দিন একদিন আসবেই। ঢাকা আমাদের হবেই।