ইলিয়াস আলীরা গুম হলে ফিরে আসে না

বাসন্ত বিষুব
Published : 20 April 2012, 05:18 PM
Updated : 20 April 2012, 05:18 PM

পুরো দেশে এখন ইলিয়াস আলীতে ভরে গেছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, ব্লগ ও ফেসবুক সবজায়গাতেই ইলিয়াস আলী। ইলিয়াস আলী এখন রাজপথে, রাজনীতিতে এবং আদালতে। ইলিয়াস আলীই এখন বাংলাদেশ।

কে এই ইলিয়াস আলী? দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একজন আলোচিত, কখনো বিতর্কিত এবং সম্ভাবনাময় একজন নেতা। তিনি সিলেট বিএনপির সভাপতি এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

এই লোকটা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় 'হারিয়ে' গেছেন। এই লোকটা তার নেত্রীর নির্দেশে লুকিয়ে আছেন। লোকটা তার দলের লোকদের হাতেই কুপোকাত হয়েছেন। এই কথাগুলো আমাদের সরকার প্রধান ও সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। একজন মন্ত্রীর এপিএস যেমন টাকার বস্তা নিয়ে গাড়ি হাকাতে পারেন তেমনি ইলিয়াস আলীর মত লোকেরা হারাতেই পারেন- এমনটাই আমাদের সরকারের ধারণা।

কিন্তু হারাধনের কথা বোধহয় আমরা ভুলে গেছি। আমরা ভুলে গেছি, ছেলেরা একবার হারিয়ে যেতে শুরু করলে তা আর থামে না। আজ ইলিয়াস আলী হারিয়েছেন, কাল আরেক জন হারাবেন। হারিয়ে যাবার পালায় কবে যে কার পালা এসে যাবে তাকে কে জানে!

আগের লেখায় বলেছিলাম, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে একটি গুঞ্জন আছে। বলেছিলাম, রাজনৈতিক আলোচনা ঘুরিয়ে দিতেই তাকে গুম করে রাখা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে তাকে একটি নাটকের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই গুঞ্জনটা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন গুঞ্জন। কী সেই গুঞ্জন?

যারা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট এবং যারা অভিজ্ঞ, তারা এখন বলছেন ভিন্ন কথা। সে কথা সম্ভাবনার নয়, আশংকার। তারা ইতিহাসকে টানছেন, বলছেন- এর আগে যারা গুম হয়েছেন তাদের ফিরে আসার নজির নেই। বিশেষকরে, ইলিয়াস আলীর মত লোকেদের। কারণ এই মাপের লোকদের একবার ছিনিয়ে নিয়ে আবার ফিরিয়ে দেওয়াটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি কেউ নিতে চায় না। এতে অনেক অনর্থ ঘটে, থলের বিড়াল বের হয়ে আসে। তাই ইলিয়াস আলীকে নিয়েও দানা বাধতে শুরু করেছে সেই আশংকা- ফিরে না আসার আশংকা। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ইলিয়াস আলীর মত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার চাইতে চিরতরে গুম করে রাখাটাই নাকি বেশি নিরাপদ। হরতাল কিংবা গাড়ি ভাংচুর আর কত দিন হবে। একদিন সবকিছুই থেমে যাবে, একদিন সবাই ব্যস্ত হবে যার যার কাছে। শুধু ইলিয়াস আলীদের নামটা লেখা থাকবে নিখোঁজের খাতায়।

কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়, আজ যারা গুম করছেন একদিন তারাও হয়তো গুম হতে থাকবেন। এ খেলা বন্ধ হবে না।