রাবির সংঘর্ষের নেপথ্যে পদ্মা সেতুর চাঁদা

বিডিনিউজ২৪
Published : 17 July 2012, 03:41 AM
Updated : 17 July 2012, 03:41 AM

ইবনুল কাইয়ুম সনি, নাদিম মাহমুদ, লিয়াকত আলী বাদল

রাবি/রাজশাহী/রংপুর, জুলাই ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকে দ্বন্দ্ব চললেও পদ্মা সেতুর জন্য টাকা তোলাকে কেন্দ্র করেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার কথায় তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকার সমর্থক সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে রোববার রাতের ওই সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।

নিহত আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করলেও রংপুরে তার পরিবারের সবাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

গত ২৫ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। এরপর গত ৪ জুলাই নতুন কমিটির সমাবেশে আবাসিক হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৭টি ইউনিটে ভাগ করে প্রত্যেক ইউনিটের কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওই ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে পদ পাওয়া নিয়ে রেশারেশি শুরু হয় এবং সেদিনই মারামারিতে আহত হন দুই নেতা।

এর মধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণে তহবিল সংগ্রহ অভিযানে নামে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। গত ১২ জুলাই এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন বাতিল করলে সরকারের পক্ষ থেকে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা আসে। এরপরই সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনির রাবি শাখা তহবিল সংগ্রহে নামে।

এই পর্যন্ত তহবিলে ১৮ হাজার টাকা উঠেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

ওই অর্থ কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে সভাপতি আলী আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু হোসাইন বিপুর দুই অনুসারীর কথা কাটাকাটিই রোববারের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায় বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান বারী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সন্ধ্যায় ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ সংগ্রহ নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই ছিলেন।

সেখানে সাধারণ সম্পাদক সমর্থক সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিমের সঙ্গে নিজের কথা কাটাকাটি হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন।

পদ্মা সেতুর জন্য অর্থ সংগ্রহ নিয়ে ওই তর্কাতর্কি হয় বলে স্বীকার করেছেন তুহিন। তবে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিকে অনুরোধ করেন তিনি।

সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন বলেন, "তারা (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) নিষেধ করেছে, এই জিনিসটা (পদ্মা সেতু) যেন হাইলাইট না হয়।"

মেহেদী হাসান জানান, আলোচনার পর সভাপতি সমর্থকরা হলে ফিরে গেলেও থেকে যায় সাধারণ সম্পাদক সমর্থকরা।

এরপর রাত ১১টার দিকে মাদার বখশ হলে তাকিমের সঙ্গে সভাপতির অনুসারী তুহিনের আবার তর্কাতর্কি বাঁধে, তা থেকে দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়।

সংঘর্ষে জড়িত সহসভাপতি তাকিম অবশ্য দাবি করেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য টাকা তোলা এই সংঘর্ষের কারণ নয়। "টাকা উত্তোলন ও সংরক্ষণের দায়িত্ব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের," বলেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইনও সংঘর্ষের কারণ হিসেবে পদ্মা সেতুর অর্থ তোলাকে মানতে অস্বীকার করেছেন। আর এই বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাননি সভাপতি আলী আহমেদ।

সোহেলের বাবা জামায়াত নেতা

নিহত সোহেল রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুস সালাম সরকারের ছেলে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন জেলা জামায়েতের আমির মাহবুবুর রহমান বেলাল।

ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ করলেও সোহেলের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, তাদের ছেলে কোনো সংগঠনই করত না।

সোহেলের বাড়ি কাউনিয়া উপজেলার শাব্দি ভুতছাড়া গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি জেনেছেন, তার বাবাই শুধু জামায়াত করেন না, তার স্বজনরা সবাই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত।

তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল সোহেল। মৃতের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সন্তানের অকাল মৃত্যুতে সোহেলের মা আনজানা বেগম বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তার বাবাও। সবাই শোকাহত।

সোহেলের চাচাতো বোন সুফিয়া বেগম, মামা খায়রুল আলম ও চাচা সোলেমান মিয়া দাবি করেন, সোহেল কোনো সংগঠন করত না। ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমএইচপি/এমআই/২০২৫ ঘ.