গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ ও শেখ শাহরিয়ার জামান
ঢাকা, ১৭ জুলাই (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পদ্মা সেতু নির্মাণ ও এতে অর্থায়নের জন্য একটি চীনা প্রতিষ্ঠান নতুন এক প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, যা বিশ্ব ব্যাংক নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে করা চুক্তির চেয়ে সুবিধাজনক বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহে পাওয়া ওই প্রস্তাব পর্যালোচনার পর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এই চীনা কোম্পানি ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পের জন্য ৭০ শতাংশ অর্থ দিতে আগ্রহী, যার জন্য তারা কোনো সুদ নেবে না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রস্তাব পাওয়ার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে আমার কিছু বলা উচিৎ হবে না। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, এর বাইরে আমি কিছু বলতে চাই না।"
বরং দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলতে আপত্তি নেই বলে জানালেন ওবায়দুল কাদের।
দেশের সবচেয়ে বড় এ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য সরকার যে চুক্তি করেছিল, তাতে বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণের জন্য শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে 'সার্ভিস চার্জ' নেওয়ার কথা বলেছিল। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের জন্য 'সার্ভিস চার্জ' ধরেছিল ১ শতাংশের সামান্য কম।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "চীনা কোম্পানির প্রস্তাবের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে, ঋণের জন্য তাদের কোনো সুদ দিতে হবে না। প্রকল্পের মান নিশ্চিত করার সুযোগ থাকবে এবং সরকারের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভেও হাত দিতে হবে না।"
তিনি জানান, এই প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারকে মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ বহন করতে হবে, আর তা হবে স্থানীয় মুদ্রায় (টাকা)। এ সেতুর জন্য প্রচুর সামগ্রী প্রয়োজন হবে যা দেশেই তৈরি করা যাবে।
"মূল সেতুর কাজ, নদী শাসন ও রেল লাইন বসানের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানটি তিনটি কোম্পানিকে নিয়ে একটি কনসোর্টিয়াম করবে। প্রকল্পের সব কাজ শেষ হতে সময় লাগবে তিন বছরের কম।"
যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক ও ঋণদাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে অর্থায়নের চুক্তি করেছিল- তাতে প্রকল্পের সময় ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর।
বিশ্ব ব্যাংক সম্প্রতি ওই চুক্তি বাতিল করে দেওয়ায় বহু আলোচিত এ প্রকল্প অনিশ্চিতায় পড়ে এবং সরকার মরিয়া হয়ে বিকল্প খুঁজতে শুরু করে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে থাকা এই সেতু নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ১৬ জেলার সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। এতে ওই এলাকার প্রায় ৬ কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটার পাশাপাশি জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও ০.৬ শতাংশ অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হয়।
অষ্ট্রেলিয়াভিত্তিক চীনা প্রতিষ্ঠানটি গত সপ্তাহে ইআরডি কর্মকর্তাদের যে প্রস্তাব শুনিয়েছেন, তাতে মূল পরিকল্পনার চার লেনের বদলে ছয়টি লেন রাখার কথা বলা হয়েছে।
"মনে হচ্ছে, এটা একটা শাপে বরই হলো", বলেন ওই কর্মকর্তা।
"আমরা ওই কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, নির্মাণ কাজের মান নিশ্চিত করার কাজটি কীভাবে হবে। তারা আমাদের বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি কোনো স্বাধীন সংস্থাকে এ কাজ তদারকের দায়িত্ব দেয় তাহলে তাদের আপত্তি নেই।"
অবশ্য এক্ষেত্রে তদারক সংস্থা নিয়োগের জন্য সরকারকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হবে, যা হবে ২৯০ কোটি ডলারের মূল প্রকল্প ব্যয়ের অতিরিক্ত।
আর সেতু নির্মাণের পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে টোল আদায়ের মাধ্যমে সরকার ২০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ শোধ করতে পারবে বলে ইআরডি কর্মকর্তা জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/জিএনএ/টিআইকে/জেকে/০৯৪০ ঘ.