‘ইউনূসের পিছু লাগা বন্ধে ঢাকাকে হুমকি দিন’

বিডিনিউজ২৪
Published : 16 August 2012, 05:12 AM
Updated : 16 August 2012, 05:12 AM

ঢাকা, অগাস্ট ১৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূসকে নিয়ে সরকারের বর্তমান অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে সহযোগিতা বন্ধের হুমকি দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে পরামর্শ দিয়েছেন উইলিয়াম বি মাইলাম।

পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও একই পথ অনুসরণ করতে বলেছেন গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিন বছর ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা এই কূটনীতিক।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে মঙ্গলবার মতামত বিভাগে প্রকাশিত এক কলামে এই পরামর্শ দেন বর্তমানে 'উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার'র এই পণ্ডিত।

গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়া এবং সর্বশেষ এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিধি সংশোধনে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে ওয়াশিংটনের উষ্মা প্রকাশের মধ্যেই এনিয়ে কলম ধরলেন মাইলাম।

তিনি লিখেছেন, "গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব সরকার নিতে চায়- এমন আতঙ্ক গত ১৮ মাস ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই ব্যাংকটিকে, সেই সঙ্গে এর প্রতিষ্ঠাতা (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ড. ইউনূসকে।

"ইউনূস নিজে এই শঙ্কার কথা প্রকাশ করে আসছিলেন, চলতি মাসে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পদক্ষেপ তা স্পষ্ট করেছে।"

গত ২ জুন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের বিধি পরিবর্তন করে 'সংশোধিত গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ' জারির সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।

ইউনূসের দাবি, এর মধ্যদিয়ে সরকার তার ভাষায় 'গরিবের' এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে চাইছে।

মাইলামও মনে করেন, সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যানের দ্বারা গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা নিয়োগ হলে তাই ঘটবে। 'দুর্নীতিবাজ' সরকারি কর্মচারীরা এখন ব্যাংকটিতে 'লুটপাট' চালাবে।

ইউনূসের বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে, যা শেখ হাসিনা সরকার ধর্তব্যের মধ্যেই আনছে না বলে মাইলামের পর্যবেক্ষণ।

এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তার পরামর্শ, "যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সরকারগুলোকে দ্বিপক্ষীয় সব সহযোগিতা (বাংলাদেশকে) বন্ধের হুমকি দিতে হবে। একই কাজ করতে হবে বিশ্ব ব্যাংকের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।"

বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গত বছর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েও হেরে যান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইউনূস।

২ অগাস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরও কয়েক বছর ইউনূসের এমডি থাকার বৈধতা ও এমডি থাকাকালে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বৈধতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্তও হয়।

পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য আনা অর্থের কর পরিশোধ হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত জানান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

এই সব বিষয় ধরে মাইলামের বক্তব্য, ইউনূসের ভাবমূর্তি 'ক্ষুন্নের' সরকারি চেষ্টার এটা সর্বশেষ পদক্ষেপ। তার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস।

"ক্ষুদ্রঋণ দাতা সংস্থাগুলো রক্তচোষা বলে সরকার দাবি করে এলেও এর বিপরীত কথাটিই সত্য, এই ধরনের ব্যাংকগুলো গরিব মানুষকে সুদখোর মহাজনদের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে," বলেছেন তিনি।

ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় ২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কথাও এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক।

সরকারের এই অবস্থানের পেছনে দীর্ঘ মেয়াদে রাজনীতিবিদদের স্বার্থের পথে ইউনূস হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন- এমন শঙ্কাও কাজ করেছে বলে মনে করেন মাইলাম।

তার মতে, সরকারের ওপর নির্ভর করার যে সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে ছিল, তা থেকে মানুষকে 'মুক্তি' দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক।

ইউনূসকে নিয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের বিভিন্ন মন্তব্যের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, "বিভিন্ন সময়ই আওয়ামী লীগের আক্রোশের স্বীকার হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের বিশিষ্ট জনদের অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগ সরকার ইউনূসকে সরাতে চায়।"

ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়ার আগে নাম উল্লেখ না করে তার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সেনা মদদপুষ্ট বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার সময়েও তার রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টার সমালোচনাও করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

১৯৯০ থেকে '৯৩ সাল পর্যন্ত ঢাকায় কাজ করে যাওয়া মাইলাম জানান, তখন থেকেই ইউনূসকে চিনতেন তিনি এবং সর্বশেষ তাদের কথা হয়েছে ২০১১ সালে ঢাকায়।

২০১১ সালে ঢাকা সফর শেষে ফিরেই গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন বলে এই কূটনীতিক তার কলামে লিখেছেন।

"তখন আমার উদ্বেগের বিষয়টি তারা ধরতে পারেনি। এখন মন্ত্রিসভার (বাংলাদেশের) সিদ্ধান্তের পর আমাকে বলা হয়েছে, এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে তারা," বলেন মাইলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএল/এমআই/০০৩৫ ঘ.