ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- উচ্চ আদালতের মামলা তুলে নেওয়া হলে 'প্রচলিত পদ্ধতিতে' মেডিকেলে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।
তবে কাজ এগিয়ে রাখার জন্য শিগগিরই আবেদনপত্র সংগ্রহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আন্দোলনরত ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, "মামলা তুলে নিলে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভর্তি করা হবে। মিটিংয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
অবশ্য তার আগেই ভর্তির আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিগগিরই এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেওয়া মো. ফয়েজ বলেন, "আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। আমরা আমাদের দাবি নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু অনেক কথাই বলতে পারিনি।"
পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য 'স্পষ্ট নয়' বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ফয়েজ জানান, মামলা প্রত্যাহার করা হবে কি না সে বিষয়ে আলোচনা করে বিকালে সাংবাদিকদের জানানো হবে।
বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অংশ নেন আটজন প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে পাঁচজন সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বাকি তিনজনের অবস্থান পরীক্ষা ছাড়াই মেডিকেলে ভর্তির পক্ষে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির ছাড়াও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. সারফুদ্দিন আহমেদ। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন কলাম লেখক সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ।
সরকার গত ১২ অগাস্ট ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ঘোষণা দিলে আন্দোলন শুরু করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তারা রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপিও দেয়।
সরকারের ঘোষণার পর পুরনো পদ্ধতিতে ভর্তি চেয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ইউনূস আলী আকন্দ নামে এক অভিভাবক। ওই রিট আবেদনে গত ২৭ অগাস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দেয়। এখন অন্য বেঞ্চে এর শুনানি হবে।
এছাড়া আরেকটি রিট আবেদনে একটি রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
বিষয়টি আদালতে গড়ানোয় মেডিকেলের ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না বলে শনিবার এক অনুষ্ঠানে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক।
তিনি বলেন, মামলা প্রত্যাহার না করায় ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ইতোমধ্যে এক অনুষ্ঠানে সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলেছেন। তবে বিরোধী দল বিএনপি এর বিরোধিতায় বলেছে, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে ভর্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
'মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মঞ্চ' ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসা ভর্তিচ্ছুরা শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এক নাগরিক সমাবেশে জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাদের আপত্তি নেই। তবে সেই আলোচনা প্রকাশ্যে হতে হবে।
তাদের ওই ঘোষণার পরই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়।
সরকার গত বছর থেকে বাংলাদেশের সব ধরনের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে যৌথভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। সারাদেশের ২০টি কেন্দ্রে ৪০ হাজারের বেশি ছাত্র গত বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়। তখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যে কোনো একটিতে জিপিএ ৩.৫ সহ মোট জিপিএ ৮।
বাংলাদেশের সবগুলো মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ মিলিয়ে মোট ৮ হাজার ৪৯৩টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২২টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা ২ হাজার ৮১১টি। আর ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেলে ৪ হাজার ২৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া ৯টি 'পাবলিক' ডেন্টাল কলেজ ও মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ৫৬৭টি আসন রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এনআইএইচ/জেকে/১১৪৫ ঘ.