হালখাতার হাল

বিডিনিউজ২৪
Published : 14 April 2011, 01:55 PM
Updated : 14 April 2011, 01:55 PM

জান্নাতুল ফেরদাউস
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

ঢাকা, এপ্রিল ১৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নতুন বছর শুরু, শুরু নতুন একটি খাতা খোলা, হিসাব-নিকাশ হালনাগাদ করা- দোকানগুলোতে এ চিত্রের দেখা এখন আগের মতো মেলে না। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হাতে লেখা খাতা থেকে অনেককে নিষ্কৃতি দিয়েছে, সেই সঙ্গে কেড়ে নিচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার বন্ধনের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ আচারও।

হালখাতা শুধু হিসাবের নতুন খাতা খোলার বিষয়ই নয়, পাওনা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের আপ্যায়নের বিষয়টিও জড়িয়ে আছে হালখাতা ঘিরে।

মফস্বল এবং পল্লী অঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ী হালখাতার এই প্রথা ধরে রাখলেও মহানগরীর বেশির ভাগ বিপণি বিতানে তা দেখা যায় না, যদিও পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী হালখাতার এই রেওয়াজ ধরে রেখেছেন। বিশেষ করে গহনার দোকানগুলোতে তা দেখা যায়।

৪২ বছর ধরে হালখাতা করে আসা চাঁদনী চক মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী শ্যামাপদ সরকারের কাছে হালখাতা মানে ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করার একমাত্র সুযোগ।

"পুরো বছর বিভিন্ন কারণে ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্কের ভিন্নতা ঘটে। পহেলা বৈশাখের দিনে ক্রেতাকে নিমন্ত্রণ করে তার নামে পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন বই খোলার মাধ্যমেই আবার শুভ সম্পর্কের সূচনা করা হয়", বলেন তিনি।

মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনকাল থেকে নতুন বছরের শুরুতে এ হালখাতার ব্যবহার শুরু হয়। পুরনো হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তাই হালখাতা নামে পরিচিত। লাল কাপড়ে বাঁধাই করা মোটা এ খাতাটিই একসময় ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার ব্যবসায়িক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করতো। যা হাল আমলে কম্পিউটারই করছে।

সরকারি পঞ্জিকা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালন করা হলেও পুরনো পঞ্জিকায় এ দিনটি আসে এক দিন পরে। সে অনুযায়ী অনেক ব্যবসায়ী হালখাতার আয়োজন করছেন শুক্রবার।

রাজধানীর চাঁদনী চক, নিউ মাকের্টের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, যারা পুরনো ব্যবসায়ী তারা এখনো ক্রেতাকে এ দিনে নিমন্ত্রণ করতে ভোলেননি। তবে ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধনকে এখনকার বিক্রেতারা খুব একটা প্রাধান্য দেন না।

ধানমণ্ডির প্রিন্স প্লাজার খান ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক সত্যব্রত রায় জানান, যারা পুরনো ক্রেতা তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়। তবে আগে ক্রেতাদের উপহার দিলেও এখন আর দেওয়া হয় না।

ফাতেমা খানম ২০ বছর ধরে কাকলী ক্লথ স্টোর নামে একটি দোকান থেকে শাড়ি কিনে আসছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আগে এই দিনে নিমন্ত্রণ অবশ্যই থাকতো। এমনও হতো যে আমরা ক্রেতারাও বিক্রেতাদের জন্য উপহার নিয়ে যেতাম। কিন্তু তা আর হয় না।"

এ বিষয়ে কাকলী ক্লথ স্টোরের মালিক রনজিৎ সাহা বলেন, "আগে সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই জিনিস পরিবর্তন করে দেওয়া হতো। এমনকি ক্রেতাকে অনেক টাকার বাকিও দেওয়া হতো, যার হিসাব থাকতো খাতায়। এখন বাকির হিসেব খুব কমই হয়। ক্রেতাদেরও কম্পিউটারাইজড স্লিপ দেওয়া হয়। এ স্লিপ দেখিয়েই ক্রেতারা প্রয়োজনে জিনিস পরিবর্তন করতে পারেন।"

বেশিরভাগ বিক্রেতারাই জানান, এখন অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে বিক্রি হয়, ফলে খাতা রাখার খুব একটা প্রয়োজন হয় না।

যারা হালখাতা তৈরি করেন, তাদের কথায়ও একই সুর পাওয়া গেলো। পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার হালখাতা বিক্রিকারী বিমল কান্তি দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আগের মতো এখন আর ব্যবসায়ীরা এ খাতা কেনেন না। আগে যেখানে একেকজন ব্যবসায়ী একবারে কয়েক মাসের খাতা কিনতেন এখন সেখানে এটা কমে এসেছে মাত্র পাঁচ-ছয়টিতে। ধীরে ধীরে এ প্রথাটি উঠেই যাচ্ছে।"

তবে সোনার দোকানগুলোতে খাতার ব্যবহার এখনো রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/জেএফ/আরএ/এমআই/১৮৩০ ঘ.