এ যেন মেলার নগরী

বিডিনিউজ২৪
Published : 14 April 2011, 02:05 PM
Updated : 14 April 2011, 02:05 PM

শহীদুল ইসলাম
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

ঢাকা, এপ্রিল ১৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ধামা ভরা হাতি-ঘোড়া, মঠ-রাজা-পালকি। সবই চিনির তৈরি। জীবন্ত রাজা-রানীও আছেন। তারা হাতি-ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাস্তায়। ওইতো নাগর দোলার চক্কর। আঙুলের ইশারায় নাচছে পুতুল। আরবাঁশির সুরে নাচছে মানুষও। পিঠা আর পান্তা-ইলিশের এই উৎসবে 'অতিথি সংস্কৃতি' হিসেবে এসেছে ভুভুজেলার ভুবন বিদারী আওয়াজ।

গ্রাম বাংলার এইসব ঐতিহ্য এখন যেন একদিবসী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সারা বছর এ সবের খোঁজ না পড়লেও অনেক কিছুরই দেখা মিলছে রাজধানীতে পহেলা বৈশাখের মেলায়। বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজধানীর ১৭৫টি স্পটে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া-মহল্লায় অলি-গলিতে। পুরো ঢাকাই যেন পরিণত হয়েছে বৈশাখী মেলায়। আর তাতে রং ছড়াচ্ছে লাল-সাদা পোশাকের নারী-পুরুষ-শিশু।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলার ছয় বছর বয়সী আদনানের সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না বাবা শফিকুল ইসলাম। প্রথমবার নাগর দোলায় উঠে ভয় পেলেও একটু ধাতস্ত হয়ে আদনান যে আর নামতেই চাইছে না।

"ছেলের আনন্দ দেখে আমি অভিভূত। আমারো ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।"

বরাবরের মতোই ছায়ানটের আয়োজনে গানের আসর বসে রমনার বটমূলে। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ঢাাকর সব পথ যেন মিশেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা আর আশেপাশের এলাকায়।

বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একাডেমী ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন যৌথভাবে আয়োজন করেছে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপকরণ আর দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন হস্তশিল্প বিক্রি হচ্ছে এই মেলায়। আরো আছে বিন্নি ধানের খৈ-এর সঙ্গে চিনির তৈরি সাজসহ বিভিন্ন খাবার। দর্শনার্থীদের ভিড়ে মেলায় হাঁটাই দায়।

এক হস্তশিল্পের দোকানে কথা হলো অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মাইকেল সফেনের সঙ্গে। বললেন, "বাঙালিদের এই উৎসবে এসে দারুণ লাগছে। কোনো মেলায় এতো মানুষের সমাগম আগে দেখিনি।"

জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজন করেছিল কবিতা উৎসবের। সেখানেও নামে মানুষের ঢল।

চারুকলা চত্বরে জীবনে প্রথমবারের মতো পুতুল নাচ দেখে বইয়ে পড়া পুতুল নাচের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া।

"অনেক গল্প শুনেছিলাম। আজ দেখলাম। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।"

রবীন্দ্র সরোবর, জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর, চন্দ্রিমা উদ্যান, মিরপুর বুদ্ধিজীবী পার্কসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মেলায় তেল-সাবান, চুড়ি-ফিতা, বাঁশি-বেহালা, ঢাক-ঢোল-খঞ্জনি, একতারা-দোতারা, হরেক রকম খেলনা, খাবারদাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ কী নেই!

রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চের পাশে ছোটদের খেলনা বিক্রি করছিরেন সেলিম। জানালেন, সকাল থেকে বেচাবিক্রি ভালোই হয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত দুই হাজার টাকার বেশি খেলনা বিক্রি করেছেন তিনি।

সকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য, লোক ও বাউল গানের আয়োজন করে। শিল্পকলা একাডেমী জাতীয় নাট্যশালাতেও ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা সেগুনবাগিচার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিঠা উৎসব ও আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শিশু সংগঠন খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল শিশুদের পরিবেশনায় নাচ-গান-আবৃত্তি।

খো খো ফেডারেশন বিকালে পল্টন ময়দানে 'বৈশাখী খো খো' উৎসবের আয়োজন করে। রবীন্দ্র সরোবরে লোকগীতি, লালনগীতি, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি, আবৃত্তি ও লোকনৃত্যর আয়োজন করে ধানমণ্ডির রিক্রিয়েশন ক্লাব।

বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ডে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী কারুপণ্য, হস্তশিল্প ও তৈরি পোশাক প্রদশর্নী। নগরের পার্কগুলোতেও ছিল বৈশাখের আয়োজন।

এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন ও গ্রামীণফোন নববর্ষ উপলক্ষে এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 'সবুজে থাকুন, কাছে থাকুন' স্লোগান নিয়ে বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করে তারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসআই/জেকে/১৮৪৪ ঘ.