রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিন: মিয়ানমারকে ওবামা

বিডিনিউজ২৪
Published : 20 Nov 2012, 05:47 AM
Updated : 20 Nov 2012, 05:47 AM

লাবলু আনসার
নিউ ইয়র্ক থেকে

নিউ ইয়র্ক, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

আর এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ইতিবাচক সাড়া দেখিয়েছে বলে সোমবার হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মিয়ানমারে ঐতিহাসিক সফরের পর ক্যাম্বোডিয়া যাওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে এই বিবৃতি আসে।

বৌদ্ধপ্রধান দেশ মিয়ানমারে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে নির্যাতনের মধ্যে ওবামা তার সফরে এই বিষয়টি তুললেন।

বাস্তচ্যুত ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থীদের চাপ বহন করে আসা বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বারবার মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

সম্প্রতি রাখাইন প্রদেশে নতুন করে দাঙ্গা শুরু হলে দলে দলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে অনেকে বাংলাদেশে ঢোকারও চেষ্টা চালায়। তবে এবার বাংলাদেশ তাদের খাদ্য ও পানীয় দিলেও আশ্রয় দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিয়ানমার সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট থিয়েন সেইন, বিরোধী নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন ওবামা।

সু চি তার সাম্প্রতিক ভারতে সফরে রোহিঙ্গাদের 'বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী' বলে উল্লেখ করেন, যার প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।

হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে বলা হয়, "রাখাইন রাজ্যে পরিস্থিতি শান্ত করতে নিজেদের অঙ্গীকারই শুধু তারা (মিয়ানমার) করেনি, বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা এবং তাদের নাগরিকত্ব সমস্যার সমাধানের কথাও বলেছে।"

সু চির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, "ঐতিহাসিকভাবে এটা প্রমাণিত যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শত শত বছর ধরে বাস করছে। বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে।"

সফরে ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটিতে দেয়া ভাষণেও রোহিঙ্গা এবং রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের বিষয়টি তুলে ধরেন ওবামা।

এই সফরে মিয়ানমারের নাম নিয়ে নিজের দেশের অবস্থান অনুসরণ করে 'বার্মা' বলেই সম্বোধন করেন ওবামা। ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটিকেও বলেন রেঙ্গুন। বিবৃতিতেও বার্মা ও রেঙ্গুনই ব্যবহার করা হয়, যে নামগুলো দেশটির জান্তা সরকার পরিবর্তন করেছিল।

রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে ওবামা ইউনিভার্সিটিতে ভাষণে বলেন, এই রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা রাখাইনরা দারিদ্র্যের কষাঘাত ও নির্যাতন সহ্য করেছে। তবে তা কখনোই নিরীহ মানুষের ওপর হামলার পক্ষে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো যায় না।

"আর রোহিঙ্গা, তাদেরও একই মর্যাদা নিয়ে সেখানে বসবাসের অধিকার রয়েছে। মানবতার স্বার্থে, এই দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে তাদের (রোহিঙ্গা) নির্যাতন এবং উস্কানি দেয়া বন্ধ করতে হবে।"

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নিজেদের আদিবাসী দাবি করে এলেও তাদের ওই অধিকারের স্বীকৃতি দেয় না।

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে দমন-পীড়নের মুখে দুই যুগ আগে থেকে বাংলাদেশে ঢুকতে থাকে রোহিঙ্গারা। ১৯৯২-৯৩ সালে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় দল বাংলাদেশে ঢুকে আসে।

শুরুতে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল। এর মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জনকে ফেরত পাঠানো হয় বলে বাংলাদেশ জানায়।

সু চির বক্তব্যের প্রতিবাদে দীপু মনি বলেন, মিয়ানমার যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে অবৈধ অভিবাসী হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

প্রথম দফায় আসা বাকি রোহিঙ্গারা তাদের সন্তান-সন্তুতিসহ কক্সবাজারে দুটি শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছেন।

তবে বিভিন্ন সময়ে ঢুকে পড়া চার থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে শিবিরের বাইরে। হিসাবের বাইরে থাকা এসব রোহিঙ্গার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের এবার ঢুকতে না দেয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ বলছে, কয়েক লাখের পর নতুন শরণার্থীর চাপ সামলানো কঠিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমআই/০০১৬ ঘ.