‘হাসিনা-খালেদা চক্র ভাঙার পথ ইউনূস’

বিডিনিউজ২৪
Published : 22 April 2011, 03:15 PM
Updated : 22 April 2011, 03:15 PM

ঢাকা, এপ্রিল ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনীতিতে প্রবেশকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ক্ষমতা বলয় ভাঙার উপায় হিসেবে দেখেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। উইকিলিকসের ফাঁস করা একটি কূটনৈতিক তার বার্তায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুতে প্রকাশিত ওই বার্তা থেকে জানা গেছে, রাজনীতিতে প্রবেশের সময় ইউনূস ধারণা করেছিলেন যে, তিনি দুই নেত্রীর বাজে প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে পারেন।

২০০৭ সালের ১৩ ফেব্র"য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কলকাতা কনস্যুলেট থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এ সব কথা বলেন কনস্যুলার জেনারেল হেনরি জারদাইন।

এর মাত্র দুদিন আগে জরুরি অবস্থার মধ্যে শান্তিতে নোবেল জয়ী ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন।

'নাগরিক শক্তি' নামের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি কলকাতা সফরে যান। ১১-১২ ফেব্র"য়ারি কলকাতা চেম্বার অব কমার্সের (সিসিসি) ১৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সফরে কলকাতা চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে জারদাইন ও ইউনূসের মধ্যে আলোচনার খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে এই তার বার্তায়।

এতে বলা হয়, ওই ভোজসভায় ইউনূসের রাজনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান হেনরি জারদাইন। জবাবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস ঝুঁকি আঁচ করতে পারছেন বলে জানান।

তিনি স্বীকার করেন, এজন্য দুই নেত্রীসহ ( শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে 'বাজে প্রতিক্রিয়া' আসতে পারে।

তবে 'দুঃশাসন আর দুর্নীতির' কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সত্যিকারের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারছেন বলে জানান তিনি।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপক পরিবর্তন ও দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারির ঠিক এক মাসের মাথায় ইউনূস রাজনৈতিক দল খোলার ঘোষণা দিলে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়, সামরিক বাহিনীর মদদেই তিনি নাগরিক শক্তি নামের এ দল খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৩ মে দল গড়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ইউনূস।

'জারদাইনের কাছে ইউনূস বলেন, দেশের শক্তিশালী দুই দলের নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কারণে দেশে রাজনীতিতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বহু মানুষের অনুরোধের কারণে তিনি রাজনীতিতে নামার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন,' বলা হয় ওই তার বার্তায়।

'ইউনূসের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে কলকাতা চেম্বারের সভাপতি মনোজ মহাঙ্কা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ইউনূসের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে কথা তোলেন।

'এর তাৎক্ষণিক জবাবে ইউনূস বলেন, রাজনীতিতে পা রাখার ঝুঁকি তিনি আঁচ করতে পারছেন। তবে দুঃশাসন আর দুর্নীতির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সত্যিকারের পরিবর্তন আনার দায়িত্বশীল কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে।'

গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান ইউনূস বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এর মাধ্যমে দেশে একটি সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এড়ানো গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই কূটনীতিককে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মীয় মৌলবাদীদের সমর্থন না করলেও প্রভাবশালী দলগুলো রাজনৈতিক স্বার্থেই তাদের সঙ্গে জোট গড়েছে।

২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মৌলবাদী দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের (বিকেএম) সঙ্গে আওয়ামী লীগের 'চুক্তি' নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।

"এই সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নৈতিক ক্ষয় প্রতিফলিত হয়েছে, যা ছিলো অতিরিক্ত কিছু ভোট হাতিয়ে নেওয়ার বিশুদ্ধ রাজনৈতিক সমীকরণ। এবং এটি ছিল তার (ইউনূস) দল গঠনের পরিকল্পনার একটি কারণ কারণ।"

প্রসঙ্গ: বন্দর

ভোজসভার আলোচনায় আঞ্চলিক বাণিজ্যের স্বার্থে ভারত, মিয়ানমার, ভূটান ও চীনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে মত দেন ইউনূস।

আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে একটি নতুন 'মেগা পোর্ট' প্রকল্পে অর্থায়নের সম্ভাব্যতা পর্যালোচনা করছে বলেও জানান ইউনূস।

বিভিন্ন বিষয়ে ড. ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে তার বার্তার উপসংহারে বলা হয়, "তিনি একজন উচ্চ নৈতিকতা সম্পন্ন এবং সাংগঠননিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ" মানুষ। আর ইউনূসের রাজনীতিতে প্রবেশ হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথ রূদ্ধ করে রাখা 'হাসিনা-খালেদা চক্র' ভাঙার একটি উপায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/বিডি/এএল/জিএনএ/২০৩৭ ঘ.