‘সরকারি মালিকানার অংশ ঠিক করতে হবে’

বিডিনিউজ২৪
Published : 25 April 2011, 06:52 PM
Updated : 25 April 2011, 06:52 PM

ঢাকা, এপ্রিল ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি মালিকানার অংশ পূর্বাবস্থায় ফেরানো এবং ব্যাংকটিকে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অধীনে আনার সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি।

কমিটি বলেছে, এটি একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ। এটি কোনো বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) নয় কিংবা প্রচলিত অর্থে কোনো ব্যাংক বা ব্যাংক-কোম্পানী বা তফসিলী ব্যাংকও নয়।

"এর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এনজিও এর কার্যক্রমের সঙ্গে মিল থাকলেও আইন অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানে সরকারের ২৫% মালিকানা রয়েছে। কিন্তু, সরকার এ সুযোগ না নিয়ে নিজেকে প্রান্তিক অবস্থানে (৩.২৯%) নিয়ে গেছে। সরকারকে অবশ্যই এটি ঠিক করতে হবে।"

গ্রামীণ ব্যাংক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি সরকারের কাছে সোমবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. একে মনোয়ার উদ্দিন আহমদকে প্রধান করে গত জানুয়ারি মাসে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মহসীন রশীদ, আর এম দেবনাথ, মো. নজরুল হুদা বেগম রোকেয়া দীন।

গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে 'ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে' নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার হয়। এতে গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল গ্রামীণ কল্যাণ নামে সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের অভিযোগ ওঠে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে।

ওই প্রামাণ্যচিত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। পরবর্তীতে বিষয়টি দেশ বিদেশের গণমাধ্যমসহ সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন। এরপরই গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে সরকার এ কমিটি গঠন করে।

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেশনের অধীনে আনা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি আইন, ২০০৬ অনুযায়ী এটি 'ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান' না হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংক মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠান নয়।

"দেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাদি তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি আইন, ২০০৬ এর মাধ্যমে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পল্লী অঞ্চলের ভূমিহীন লোকদের ঋণ প্রদান, সেহেতু, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি আইন, ২০০৬ এবং গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করে গ্রামীণ ব্যাংককে উক্ত রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের অধীনে আনা যায়।"

কমিটির মতে, এর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৪ ও ৪৫ ধারা গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রয়োগ সংক্রান্ত সরকারী গেজেট বাতিল করা যেতে পারে।

পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা সীমিত করা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের রেগুলেশন তৈরির ক্ষমতা রয়েছে।

এক্ষেত্রে, পর্ষদ রেগুলেশন প্রণয়নের আগে তাতে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি অধ্যাদেশ সংশোধন করে আবোর আরোপ করার সুপারিশ করেছে কমিটি।

পরিচলাকের সংখ্যা কমাতে হবে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "একটি কার্যকর পরিচালনা পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন করে ৯ জন ঋণগ্রহীতা-শেয়ারধারক পরিচালকের সংখ্যা ৬ জনে হ্রাস করে নতুন করে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক (ক্ষুদ্র ঋণ, গ্রামীণ অর্থনীতি, ব্যাংকিং, আইন ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ) নিয়োগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

"এর ফলে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক হবে। পর্ষদে সরকার কর্তৃক মনোনীত পরিচালকদের তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে হবে। তাছাড়া, পরিচালকের জন্য যোগ্যতা ও উপযুক্ততার মাপকাঠি প্রণয়ন করা যেতে পারে।"

এমডির বয়স ঠিক করে দিতে হবে

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত রেগুলেশন, ২০০১ এ প্রধান নির্বাহীর বয়সসীমা না থাকায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সব বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রধান নির্বাহীর নির্দিষ্ট বয়সসীমা রয়েছে।

"তাই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বয়সসীমা (যা ৬৫ বছর হতে পারে) নির্ধারণ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত রেগুলেশন, ২০০১ সংশোধন করা যেতে পারে।"

গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ ফান্ডকে গ্রামীণ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত করা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো মিলে একটি বড় ধরণের ব্যবসায়িক গোষ্ঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে যা পুনঃবিন্যাস ও পুনঃসংজ্ঞায়িত করা দরকার। গ্রামীণ ফান্ড ও গ্রামীণ কল্যাণকে অবসায়ন করে গ্রামীণ ব্যাংকের অভ্যন্তরে বিভাগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

"এক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠান দুটির সব কার্যক্রম, দায়-সম্পদ ইত্যাদি গ্রামীণ ব্যাংক এর অন্তর্গত হবে এবং এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।"

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরবি/পিডি/০০৩৯ ঘ.