তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, তবে…

বিডিনিউজ২৪
Published : 10 May 2011, 08:12 AM
Updated : 10 May 2011, 08:12 AM

ঢাকা, মে ১০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে এর আওতায় আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত আরো বলেছে, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংসদ এ সরকার পদ্ধতি সংস্কার করতে পারে।

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এবিএম, খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে এ রায় এসেছে।

রায়ের পর সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। তবে বলেছেন, শান্তিশৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে আগামী দুটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগকে এর সঙ্গে না জড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।"

অ্যাটর্নি জেনারেল পরে সাংবাদিকদের বলেন, "আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যাবে। তবে এরপর তা করা যাবে না। এর মধ্যেই সংবিধান সংশোধন করতে হবে।"

আপিলকারীর আইনজীবী এমআই ফারুকী রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, "এটা সংবিধান ও জনগণের জন্য ভালো হলো। আমরা সংবিধান রক্ষা করতে পেরেছি। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও তা হচ্ছে।"

"তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যত সামরিক আইনেরই আরেক রূপ। সামরিক আইন এলে সংবিধানের কিছু ধারা স্থগিত করা হয়, যা জিয়ার সময় ও পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি। তেমনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলেও সংবিধানের কিছু ধারা স্থগিত হয়ে পড়ে", বলেন তিনি।

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ করা হয়। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছে।

এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদনে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় রিট আবেদনকারী পক্ষ।

সলিম উল্লাহ মারা যাওয়ায় এবং অন্য আবেদনকারী রুহুল কুদ্দুস বাবু হাইকোর্টের বিচারক হওয়ায় বর্তমানে মো. আব্দুল মান্নান খান এ রিট আবেদনের বাদি হিসাবে রয়েছেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, "রায়ে খুশি হয়েছি। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলেও বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা সংসদকে দিয়েছে।"

আপিল বিভাগে গত ১ মার্চ আপিলের শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৬ এপ্রিল।

আপিলের শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে কামাল হোসেন, টিএইচ খান, রফিক উল হক, এম জহির, মাহমুদুল ইসলাম, আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসির বক্তব্য শুনেছে।

রিট আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক চরিত্রকে নষ্ট করেছে। তারা এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণার আবেদন করেন।

দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি ১৯৯৬ সালে এলেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যূত্থানে এরশাদ সরকারের পতনের পর র্অর্ন্তবতীকালীন একটি সরকারের অধীনে হয় সাধারণ নির্বাচন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের চাপে অনীহা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি।

২০০৬ সালে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

বর্তমানে সংবিধান সংশোধনের যে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করার সুপারিশ আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৩ মাস মেয়াদে নির্বাচন করতে না পারলে আগের সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান যোগ করতে।

অ্যামিকাস কিউরিয়াদের মধ্যে অধিকাংশই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষেই বক্তব্য রাখেন। তবে আজমালুল হোসেন কিউসি বক্তব্য রাখেন বিপক্ষে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সমালোচনা করে এলেও বিএনপি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, এ ব্যবস্থা বাতিল হলে আন্দোলনে নামবে তারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমআই/১২১০ ঘ.