ঢাকা, মে ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ফতোয়াকে বৈধতা দিলেও এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
ফতোয়া নিয়ে আপিলের ওপর বৃহস্পতিবার এ রায় দেয় প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারকের বেঞ্চ।
হাইকোর্টের রায়ে সব ধরনের ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও আপিল বিভাগের রায়ে তা আংশিক বাতিল করা হয়েছে, তবে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু পর্যবেক্ষণ।
আপিল বিভাগ বলেছে, ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া যেতে পারে, তবে যথাযথ শিক্ষিত ব্যক্তি তা দিতে পারবে। আর ফতোয়া গ্রহণের বিষয়টি হতে হবে স্ব^তস্ফূর্ত। এর মাধ্যমে কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে না। এমন কোনো ফতোয়া দেওয়া যাবে না, যা কারো অধিকার ক্ষুণœ করে।
রায়কে স্বাগত জানিয়ে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, "শাস্তি নিষিদ্ধ করায় ফতোয়ার মাধ্যমে নারী নির্যাতনের প্রবণতা কমবে।"
মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যক্রমে পারিবারিক আইন যুক্ত করার জন্যও সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আপিলকারীরাও। আপিলকারীদের অন্যতম আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে এ রায়। তবে এক মত জানাতে গিয়ে অন্যের মত প্রকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে কথাও রায়ে বলা হয়েছে।"
আপিলকারীদের অন্য আইনজীবী নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "এ রায়ের পর ফতোয়াকে আর কেউ উপহাস করতে পারবে না।"
২০০১ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতি গোলাম রাব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার হাইকোর্ট বেঞ্চ এক স্ব-প্রণোদিত আদেশে সব ধরনের ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর মুফতি মো. তৈয়ব ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আপিল করেন। ১০ বছরের বেশি সময় পর এ বছরের ১ মার্চ আপিলের শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে আদালত-বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরিয়া) হিসাবে টিএইচ খান, রফিক উল হক, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল ইসলাম, এম জহির, এবিএম নুরুল ইসলাম, এএফ হাসান আরিফ, তানিয়া আমীর এবং এমআই ফারুকী বক্তব্য শোনে আপিল বিভাগ। এছাড়া পাঁচ জন আলেমের বক্তব্যও শোনে আদালত।
আপিল বিভাগ অবশ্য বলেছে, যে ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ওই রায় হয়েছিলো সে ঘটনায় ওই রায় ঠিক ছিলো। তবে সব ধরনের ফতোয়ার বিষয়ে তা খাটে না।
ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা দেশে আলোচিত। ফতোয়ার শিকার অনেক তরুণীর মৃত্যু এবং আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএন/এমআই/১০৫০ ঘ.