মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা, মে ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম না চালালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। পরে তা অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
আরপিওর ৯০ বি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে (১ ধারার ক উপধারার দফা ৩), নিবন্ধন পেতে হলে একটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে এবং একটি কেন্দ্রীয় কমিটি থাকতে হবে। একইসঙ্গে দেশের অন্তত এক তৃতীয়াংশ জেলায় তাদের দলীয় কার্যালয় এবং অন্তত একশ' উপজেলায় তাদের দুই শ' জন করে সদস্য থাকতে হবে যারা ওই এলাকার ভোটার।
এছাড়া কোনো দলের প্রার্থী দলীয় প্রতীক নিয়ে ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে অন্তত একটি আসন পেয়ে থাকলে অথবা কোনো দলের প্রার্থীরা মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেয়ে থাকলে তাদেরও নিবন্ধনের যোগ্য হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে আরপিওতে।
২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে করা এই আরপিওতে দলের কার্যালয়ের শর্ত ভঙ্গের কারণে নিবন্ধন বাতিলের কোনো বিধান ছিল না। ইসি এখন আরপিওতে তা সংযোজন করতে চাইছে।
ইসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, '৯০ বি অনুচ্ছেদের ১ ধারার ক উপধারার ৩ দফা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে।' এই ধারাটি যুক্ত করা হবে আরপিওর ৯০ এইচ অনুচ্ছেদের ১ ধারার (ছ) উপ ধারা হিসেবে।
ছহুল হোসাইন বলেন, "যে শর্তপূরণ করে সংশ্লিষ্ট দল নিবন্ধন পেয়েছে, পরবর্তীতে তা অব্যাহত রেখেছে কি না- তা আর যাচাই করা হয় না। এই সুযোগে নিবন্ধন পেয়েই দলটি সব কার্যক্রম গুটিয়ে রাখে। কোনো অফিস নেই, লোক নেই, ঠিকানা নেই- এটা তো হতে পারে না।"
ইসি সচিবালয়ের উপ সচিব (নির্বাচন) মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, যেসব দল নতুন গঠিত হয়েছে, সেগুলোকেই দলীয় অফিস ও ভোটারের সমর্থনের শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন নিতে হয়। আর পুরনো দলগুলো একটি আসনে জয় বা ৫ শতাংশ ভোট পেলে সহজেই নিবন্ধন পেতে পারে।
নিবন্ধন বাতিলের বিধি যুক্ত হলে কেউ হার 'ঠিকানাবিহীনভাবে' দল চালাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন ছহুল।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিগত নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে বাসা ভাড়া নিয়ে বা নামসর্বস্ব ঠিকানা দেখিয়ে ন্যূনতম শর্ত পূরণ করে নিবন্ধন নিয়েছে অনেক দল। সে সময় নিবন্ধন পাওয়া কয়েকটি দল তাদের জেলা কার্যালয়ের যে ঠিকানা দিয়েছে, সেখানে খোঁজ করে তাদের অফিস পায়নি ইসি।
ছহুল হোসাইন বলেন, "কেন্দ্রীয় ও জেলার অফিসের ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন পাওয়ার পর অফিস উধাও হয়ে যাওয়ার রাস্তা আর থাকবে না। নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে দলীয় অফিসে কার্যক্রম সচল রাখতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা সময়ে সময়ে এ বিষয়ে খোঁজ রাখবেন।"
৭ জুন থেকে অনুষ্ঠেয় সংলাপে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে এ সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ১১৭টি দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে। এর মধ্যে দলের খসড়া গঠনতন্ত্র দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সংশোধিত স্থায়ী গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার পর ৩৮টি দলকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেয় ইসি। নির্ধারিত সময়ে স্থায়ী গঠনতন্ত্র দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গতবার অধিকাংশ দলই নিবন্ধন পায় জেলা কার্যালয়ের শর্ত পূরণ করে। এর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের মতো নতুন সংগঠনও রয়েছে।
নিবন্ধিত ৩৮ দল: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট-বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি ও খেলাফত মজলিশ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/জেকে/২১৪৫ ঘ.