তত্ত্বাবধায়ক বাতিলে ঐকমত্য চান ব্যবসায়ীরা

বিডিনিউজ২৪
Published : 1 June 2011, 04:46 PM
Updated : 1 June 2011, 04:46 PM

ঢাকা, জুন ১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বাধীন নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব পক্ষকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতিসহ (এফবিসিসিআই) ২৮টি ব্যবসায়ী সংগঠন।

বুধবার বিকেলে এফবিসিসিআইয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, "সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে দেশে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে এবং দেশ গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হবে।"

সে ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে এবং দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার (২০০৭-২০০৯) ৯০ দিনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে ২ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে। ওই সময়ে জনগণের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, ক্ষুদ্র দোকানদার- সবার প্রতিই অমানবিক অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়।"

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

ওই সংশোধনীর পর থেকে প্রতিটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। গত ১০ মে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। তবে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে আগামী দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থায় করা যেতে পারে বলে মত দেয় আদালত।

ব্যবসায়ী নেতাদের বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বশেষ অবসর গ্রহণকারী প্রধান বিচারপতির (এ বি এম খায়রুল হক) নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এরইমধ্যে আপত্তি তুলেছে। ফলে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার ক্ষেত্রেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

"এ অবস্থায়, একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানই একমাত্র সংবিধানসম্মত ব্যবস্থা, যা একদিকে জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী ভিত্তি দেবে।"

প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন, আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচন সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মেই হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের শরিক জামায়তে ইসলামী সরকারের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৫ জুন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। বিএনপি বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। আবার সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও তা মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে দলটি।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী নেতাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "দেশের ব্যবসায়ী, কর্মজীবি, পেশাজীবী তথা সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সকল পক্ষকে সরকার গঠনের একমাত্র সাংবিধানিক ব্যবস্থা হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে যেভাবে নির্বাচন হয়, অর্থাৎ একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।"

এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএ সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএ সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এটিএম ওয়াজিউলল্ল্যাহ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মুরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি সভাপতি সালমান এফ রহমান, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নসরুল হামিদ এমপিসহ ২৮টি ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা এই বিবৃতিতে সই করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/আরবি/জেকে/২২১৫ ঘ.