বুড়িগঙ্গার পানিকে আর পানি বলা যায় না: হাইকোর্ট

বিডিনিউজ২৪
Published : 1 June 2011, 06:00 PM
Updated : 1 June 2011, 06:00 PM

ঢাকা, জুন ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বুড়িগঙ্গা নদীর পানিকে আর পানি বলা যায় না বলে অভিমত দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত মনে করে, এতে সারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে।

বুধবার আদালত বলেছে, বুড়িগঙ্গার পানি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, একে আর পানি বলা যায় না। যা সব ধরনের বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা দূষিত হয়েছে। এতে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে।

"এই অবস্থার আশু সমাধান না হলে নাগরিকরা আরো ব্যধিগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষা যেন কারোরই দায়িত্ব নয়।"

বুধবার একটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেছে।

আদালত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে 'তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা' প্রকাশ করে বলে, "এই সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালন না করার ফলেই পানির এই অবস্থা। এতে প্রতীয়মান হয়, জনগণের অর্থে পরিচালিত এই সংস্থাটি তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। অথচ নদীকে দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত রাখাই এই সংস্থার দায়িত্ব। এই অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না।"

"প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে কি না, এটা সবার প্রশ্ন।"

আদালত বলেছে, "দুইদিন আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে এই নদীর অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। যাতে বিআইডব্লিউটিএ'র অসহায়ত্বই প্রকাশিত হয়।"

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকীর করা এক রিট আবেদনে গত বছরের ৪ মে রুল দিয়েছিলো হাইকোর্ট।

আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন ব্যরিস্টার তোফায়েলুর রহমান।

এক বছরের মধ্যে পয়ঃসংযোগ বন্ধের নির্দেশ

বুড়িগঙ্গা নদীতে সংযোগকৃত সব পয়ঃপ্রণালী এবং শিল্প কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন লাইন এক বছরের মধ্যে বন্ধ করতে ওয়াসা চেয়ারম্যানকে নির্দেশও দেয় বেঞ্চ।

নদী দূষণরোধে কোন গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ'র পরিচালক (বন্দর ও ট্রাফিক), কোতোয়ালি, হাজারিবাগ, লালবাগ, ডেমরা ও কামরাঙ্গিরচর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের প্রতি মাসে এ বিষয়ে একটি অগ্রগতির প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি আরো কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে আদালত।

নদী দূষণরোধে কোন গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে বুড়িগঙ্গায় যাতে কেউ কোনো বর্জ্য ফেলতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া।

বর্জ্য ফেলা রোধে নদীর দুই পাড়ে প্রতিমাসে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে বিশেষ দলের মাধ্যমে প্রতিদিন নদী তীরের বর্জ্য অপসারণ করতে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি বা ভ্যানের মাধ্যমে নদীর তীরে ময়লা ফেলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে জনগণকে জানাতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সাইন বোর্ড ও প্ল্যাকার্ড স্থাপন করতেও সিটি কর্পোরেশনকে বলা হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএন/আরএ/পিডি/২২১৬ ঘ.