কামাল হোসেন তালুকদার
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক
ঢাকা, জুন ০৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানির কারিগর ছিলেন ওরা ছয় জন। আজ কেউই নেই। গত এক বছর ধরে বাকরখানি তৈরির সেই উনুনটি আর জ্বলছেনা।
৫৫, নবাব কাটারার ছোট বাকরখানির দোকানের এই ছয় কারিগর সালেক (৩২), গাজী রহমান (২৮), রিপন (১২), স্বপন (১২), লাউস (১৭) ও বরজু (১৭) এক বছর আগে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিকভাবে পুড়ে মারা যান। ছয় জনের বাড়িই হবিগঞ্জে।
যে সময় আগুন লাগে, মারামারি লেগেছে মনে করে দোকানের ভেতর থেকে শাটার বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা। বন্ধ দোকানেই তাদের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের একদিন পর দমকল বাহিনীর সদস্যরা দোকানের ভেতর থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
গতবছর ৩ জুন পুরান ঢাকার নীমতলীতে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে অন্তত ১২৫ জনের মৃত্যু হয়।
এক বছর পর বৃহস্পতিবার বিকালে নবাব কাটারায় ৫৫ নম্বর বাড়িটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পোড়া দোকানটি সে রকমই পড়ে রয়েছে। কোন সংস্কার হয়নি। কেউ নতুন করে দোকানটি চালুও করেনি।
উনুনের নিচে কিছু ছাই এখনও রয়েছে। বাকরখানি পোড়ানোর জন্য উনুনের সামনে যার ওপর হাঁটু চেপে বসা হোতো সেটি এখনও সে ভাবেই পড়ে রয়েছে।
ওই বাড়ির মালিক মো. ফরিদ উদ্দিন ফরিদ কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন।
অগ্নিকাণ্ডে তার মা রেনু বেগম, স্ত্রী পারভিন বেগম, ছেলে শরিফ উদ্দিন নয়ন, সাইফ উদ্দিন শ্যামল, সজিফ উদ্দিন ও শ্যালক মো. জগলু আগুনে পুড়ে মারা যান।
তবে ফরিদ উদ্দিনের তিন ছেলে বেঁচে গেছেন। তারা হলেন মো. শফি উদ্দিন, শরিফ উদ্দিন ও শরফুদ্দিন সাগর।
বৃহস্পতিবার বিকালে শফি উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই সময় আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম আর বড় ভাই শরিফ ভাবীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো আর সাগরও বাইরে ছিলো তাই বেঁচে গেছেন।
বাড়িটি এখনও সংস্কার না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির আগে বাড়িতে বাকরখানির দোকান, বেকারী ও ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভাড়া বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা পেতাম। আগুনে সবকিছু হারিয়ে আমরা এখন নিঃস্ব। বাড়িটি আছে ঠিক কিন্তু সংস্কার করার মতো অর্থ আমাদের তিন ভাইয়ের নাই।
তারা এখন নবাব কাটারায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন বলে জানান তিনি।
সরকারি কোন সাহায্য পান কিনা জানতে চাইলে শফি উদ্দিন বলেন, এক লাখ টাকা পেয়েছি। প্রথমে সরকার জনপ্রতি একলাখ টাকা দিতে চেয়েছিলো কিন্তু পরে তা পরিবার প্রতি একলাখ টাকা করা হয়। তাই এক লাখ টাকা পেয়েছি, আর কিছু পাইনি।
আগুনে পুড়ে যাওয়া রাসায়নিকের গুদামটিও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখানে কেউ আর নতুন করে কিছু করছে না।
গুদামটি যে বাড়ির নীচতলায় ছিলো সেই বাড়ির মালিক গোলজার, দিদার ও ফারুক তাদের মাসহ পরিবারের ১১ জনকে হারিয়েছেন।
গোলজার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছেলের পরীক্ষার নম্বরপত্র সত্যায়িত করতে গিয়ে আমি ও ফারুক বেঁচে গেছি।
তিনি বলেন, রাসায়নিক গুদামের মালিক ওয়াহিদ মিয়াকে আজ পর্যন্ত নাকি পাওয়া যায়নি।
নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় শুক্রবার পুরান আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কোরআন তেলওয়াত এবং বাদ জুমা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
নিমতলীতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে। আর পুরো এলাকা কালো কাপড়ের ব্যানারে ছেয়ে গেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/কেটি/কেএমএস/১০৫০ ঘ.