হরতাল শেষে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা

বিডিনিউজ২৪
Published : 17 Feb 2019, 08:14 AM
Updated : 13 June 2011, 06:05 PM

ঢাকা, জুন ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলসহ সংবিধানের বিভিন্ন ধারা সংশোধনের উদ্যোগের প্রতিবাদে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল বড় ধরনের গোলযোগ ছাড়াই শেষ হয়েছে।

আগের দিনের মতো সোমবারও বিভিন্ন স্থানে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধা পেয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা, গ্রেপ্তারও হয়েছেন অনেকে। বেশ কয়েকজনের সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

হরতালে গ্রেপ্তার নির্যাতনের প্রতিবাদে ২ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। ১৫ জুন ঢাকায় এবং ১৬ জুন জেলা-উপজেলায় এ কর্মসূচি পালন করবে দল দুটি।

ঢাকায় সোমবার গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও সিলেটের নেতা আবেদ রাজা।

আগের দিন গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির দুই সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও হাফিজউদ্দিন আহমেদ সোমবার একটি মামলায় জামিন পেলেও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় তাদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর আবেদনের শুনানি হবে ১৫ জুন।

হরতালের এই দুই দিন দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। অফিস-আদালতে কার্যক্রম চললেও উপস্থিতি ছিলো তুলনামূলক কম। বেশিরভাগ দোকানপাটই ছিলো বন্ধ।

রাজধানীতে প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনের হরতালে রাস্তায় গাড়ি বেশি দেখা গেছে। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে সড়কে পিকেটিং খুব একটা না হলেও কয়েকটি স্থানে সরকার সমর্থকদের হরতালবিরোধী মিছিল দেখা গেছে।

সোমবার সারাদেশে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়। এ ধারা চলে মঙ্গলবারও।

বিএনপি বলছে, এটা সরকারের দমন-পীড়নের নতুন কৌশল। এ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রও। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ীই কাজ করছে।

রাজধানীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতা ছিলো নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক। পুলিশ তাদের ঘিরে রাখায় মিছিল করতে পারেননি তারা।

সোমবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঢাকায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। হরতালের আগের দিন ঢাকায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় নয়টি গাড়ি। রোববার আগুন দেওয়া হয় দুটি বাসে।

ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে ঢিলেঢালাভাবেই হরতাল চলে। হরতালের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ, কুড়িগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কুড়িগ্রামে বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর হয়েছে।

বরিশালে সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার নেতৃত্বাধীন মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছে ১০ জন। বগুড়ায় পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছে সংসদ সদস্য মোস্তফা আলী মুকুলসহ সাত জন। চাঁদপুরেও মিছিলে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার-সাজা

আইনশৃঙ্খলা ব্যাহত করার অভিযোগে সোমবার ঢাকায় ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সিরাজগঞ্জে সাজা হয়েছে চার জনের। খুলনায় রোববার রাতে ছয় জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বগুড়ায় একজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, অর্থদণ্ড দেওয়া হয় চারজনকে। এছাড়া সিলেটে এক জন, বরিশালে ১৩ জন, চাঁদপুরে সাত জন, নওগাঁয় আট জন, যশোরে ১০ জন, খুলনায় পাঁচ জন, রাজশাহীতে তিন জন, নোয়াখালীতে চার জন গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

হরতাল শেষে বিএনপি দাবি করেছে, দুদিনে তাদের এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ শতাধিক কর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে।

জামায়াতের দাবি, হরতালে তাদের নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮১।

বিকেলে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুই দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে। হরতালে দমন-পীড়ন ও গ্রেপ্তারকৃত কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৫ জুন ঢাকা মহানগরী এবং ১৬ জুন সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করবে দল দুটি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এসএম/কেটি/এমআই/জেকে/২১৩৯ ঘ.