সরকার জনগণকে ভুল বোঝাচ্ছে: তেল-গ্যাস কমিটি

বিডিনিউজ২৪
Published : 24 June 2011, 11:45 AM
Updated : 24 June 2011, 11:45 AM

ঢাকা, জুন ২৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- কনকো-ফিলিপসের সঙ্গে করা 'উৎপাদন-বণ্টন' চুক্তি নিয়ে সরকার জনগণকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

রপ্তানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসকে (এলএনজি) বাদ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই কমিটির নেতারা। তারা বলছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সাগর থেকে তোলা গ্যাসের পুরোটাই রপ্তানি করার ব্যবস্থা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে পল্টনের মুক্তি ভবনে 'কনকো-ফিলিপস এর সাথে বঙ্গোপসাগরের তেল-গ্যাস চুক্তি কেন জাতীয় স্বার্থবিরোধী' শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।

আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, "স¤প্রতি অনুমোদিত রপ্তানি নীতিতে রপ্তানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা থেকে এলএনজিকে বাদ রাখা হয়েছে। এটা কিসের আলামত?"

রপ্তানিনীতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন ছিলো না মন্তব্য করে তেল-গ্যাস কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, "কনকো ফিলিপসের সঙ্গে করা চুক্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে- এটা বলে সরকার জনগণকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। তাদের বক্তব্যে মনে হয়, আমরা যে কিছুটা পাচ্ছি এটাই বেশি।"

বঙ্গোপসাগরের দুটি ব্লক থেকে তেল-গ্যাস উত্তোলনে গত ১৬ জুন কনকো-ফিলিপসের সঙ্গে এই চুক্তি করে সরকার। তেল-গ্যাস কমিটি শুরু থেকেই এ চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে।

চুক্তি বাতিলের দাবিতে আগামী ৩ জুলাই ঢাকায় অর্ধদিবস হরতালও ডেকেছে সংগঠনটি।

কমিটির বক্তব্য, কনকো-ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি হলে মডেল পিএসসি অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০ শতাংশ গ্যাস পাবে। বাকি ৮০ শতাংশ গ্যাস নির্দিষ্ট দরে কিনে নিতে হবে। বাংলাদেশ ওই গ্যাস কিনতে না পারলে কনকো-ফিলিপস তা রপ্তানি করতে পারবে।

অবশ্য সরকার বলে আসছে, কনকো-ফিলিপস সাগরে গ্যাস পেলে তারা তা সরকারের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য থাকবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি সাক্ষমতা না থাকায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তি করতে হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ আলোচনা সভায় বলেন, "সরকারি সংস্থার দক্ষতার অভাবের কথা বলে বিদেশি কোম্পানিকে দুটি ব্লক ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সক্ষমতাই যদি না থাকে তাহলে পেট্রোবাংলা পিএসসি মনিটরিং করবে কীভাবে? দুর্ঘটনা ঘটলে তার কারণই বা কীভাবে চিহ্নিত করা হবে?"

চুক্তি নিয়ে তেল-গ্যাস কমিটির বক্তব্য খণ্ডন করতে না পেরে সরকার কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এই চুক্তির বিরোধিতা করায় তেল-গ্যাস কমিটির কঠোর সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গত রাববার জাতীয় সংসদে বলেন, ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে কিছু টোকাই নিয়ে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চুক্তির বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "আমরা যখন দেশের জন্য কাজ করছি, আপনারা তখন বিরোধিতা করছেন। যখন বিদ্যুৎ-গ্যাস ছিল না, তখন তো কিছু বলেননি।"

তেল-গ্যাস কমিটির আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কনকো-ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি বাতিলসহ ৭ দফা দাবিতে আগামী ৩ জুলাইয়ের হরতাল সফল করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

অন্যদের মধ্যে 'সমুদ্র বিশেষজ্ঞ' নূর মোহাম্মদ, 'পানি বিশেষজ্ঞ' ম, ইনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আকমল হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আকতার হোসাইন, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ ও প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া বাংলদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএমআর/জেকে/১৬৩৫ ঘ.