‘বিদ্যুৎ চাহিদা হিসাব হয় অনুমানে’

বিডিনিউজ২৪
Published : 4 August 2011, 08:55 PM
Updated : 4 August 2011, 08:55 PM

আমিনূর রহমান রাসেল
বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম প্রতিবেদক

ঢাকা, অগাস্ট ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম)- বিদ্যুতের চাহিদা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে 'গড়মিল' থাকার কথা স্বীকার করে সঞ্চালন ও লোড-ম্যানেজমেন্ট সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বললেন, হিসাবের কাজটি তারা করেন অনুমানের ভিত্তিতে।

রমজানের শুরুতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ডের পাশাপাশি লোড-শেডিংয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে অসন্তোষ শুরু হলে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা ও উৎপাদনের পার্থক্য নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা দৈনিক গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার কথা বললেও লোড-শেডিং বাড়ার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারছিলেন না।

বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবির) ওয়েবসাইটে দেওয়া পিজিসিবি'র পরিসংখ্যানে বলা হয়, সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে চার হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

কিন্তু একইদিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের 'পরিকল্পনা উপস্থাপন' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ৭ হাজার মেগাওয়াট। আর এখন উৎপাদন হচ্ছে ৫ হাজার ৫২ মেগাওয়াট। তাই এখনো ২ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি। এ জন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।"

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে পিজিসিবির তথ্যের পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বপালনকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. জামাল উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রী হয়তো বাস্তবতার নিরিখে বক্তব্য দিয়েছেন। আসলে চাহিদার বিষয়টি অনুমানের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয়।"

পিজিসিবির পরিসংখ্যানে চাহিদা কম দেখানোর কারণ জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "আসলে চাহিদা নির্ণয়ে একটা গড়মিল রয়ে গেছে।"

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। গত আড়াই বছরে বেশ কিছু নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে এবং জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে ২ হাজার ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে।

গত ১২ জুন রেকর্ড চার হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ১৮ জুলাই তা ভেঙে চার হাজার ৯৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। আর গত মঙ্গলবার রাতে উৎপাদনের পরিমাণ পাঁচ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়।

কিন্তু রোজা শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই লোড-শেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে থাকায় বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় অসন্তোষ। মুন্সীগঞ্জ, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করে।

এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগের সরবরাহ করা তথ্য নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) বিদ্যুতের চাহিদা (পিক আওয়ারে) ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ১৩০০ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ৫০০ মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ১০০০ মেগাওয়াটের এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট।

এই হিসাবে মোট চাহিদা দাঁড়ায় সাত হাজার মেগাওয়াটের মতো, যদিও বিদ্যুৎ কর্তপক্ষ মোট সাড়ে পাঁচ হাজার চাহিদার কথাই এতোদিন বলে আসছিল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম/এআরআর/জেকে/২২১০ ঘ.