বাসাবাড়িতে গ্যাস বন্ধের পক্ষে মুহিত

বিডিনিউজ২৪
Published : 9 August 2011, 04:03 PM
Updated : 9 August 2011, 04:03 PM

ঢাকা, অগাস্ট ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গৃহস্থালিতে গ্যাস সরবরাহ ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ বলে মত প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

মঙ্গলবার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "পৃথিবীর খুব কম দেশেই প্রাকৃতিক গ্যাস গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হয়। ভবিষ্যত জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য গৃহস্থালিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ।"

প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে বাসাবাড়িতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, " প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে এলপিজি দিয়ে বাসা-বাড়িতে রান্না করতে হবে।"

সরকারি হিসাবে, দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ১২ শতাংশ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হয়। ২০০৯ সাল থেকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রেখেছে সরকার।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল পেট্রোবাংলায় এক সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বলেন, "গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। আগামীতেও আর না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য আমরা এলপিজিকে প্রমোট করবো।"

চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, "ভবিষ্যতে বাসা-বাড়িতে রান্নার জন্য দেশের সব এলাকায় প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সহজলভ্য করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।"

জ্বালানি ব্যবহারে সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের অনুষ্ঠানে মুহিত বলেন, "স¤প্রতি জাপানে ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিপর্যয়ে তারা ৩০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদেরও জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে নজর দিতে হবে।"

সরকারের গত আড়াই বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরো প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করতে পারবো।"

গত আড়াই বছরে গ্যাসের উৎপাদন প্রায় ৩০ কোটি ঘনফুট বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া সেমিনারে বলেন, "গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।"

কয়লানীতি প্রণয়নের জন্য অপেক্ষা না করে এখনই কয়লা উত্তোলনের পক্ষে মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মুক্তাদির আলী বলেন, "জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি মজুদ রাখার মতো ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আমরা মাত্র নয় লাখ টন তেল মজুদ রাখতে পারি, যা দিয়ে দেড় মাস চালানো যায়।"

জ্বালানি সংগ্রহে অর্থ সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "গত অর্থবছরে তেল আমদানি ও সরবরাহ শেষে ঘাটতি দাঁড়ায় আট হাজার কোটি টাকা। এভাবে ঘাটতি বাড়তে থাকলে তেল আমদানি কঠিন হয়ে পড়বে।"

জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন বলেন, "জ্বালানি সংরক্ষণের জন্য গ্যাসের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।"

জ্বালানি তেলের মজুদ নয় লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ১৪ লাখ টন করার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ওই পরিমাণ তেল দিয়ে সাড়ে তিন মাস চলা সম্ভব।

'জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস' পালন প্রসঙ্গে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৯ অগাস্ট বিদেশি কোম্পানির অধীনে থাকা পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এনেছিলেন।

"বঙ্গবন্ধুর এ ঐতিহাসিক পদক্ষেপকে স্মরণীয় করে রাখতে ৯ অগাস্ট জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।"

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আয়োজনে মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো এ দিবস পালন করা হয়। সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শেষ হয়।

বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) মোল্লা মোহাম্মদ মবিরুল হোসেন।

তিনি বলেন, "দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রমের আওতায় ২০১৫ সালের মধ্যে দেশীয় কোম্পানির অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক আরো ১৮ কোটি ঘনফুট এবং আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির মাধ্যমে ৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।"

অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুনিরা আক্তার চৌধুরী বক্তব্য দেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এআরআর/জেকে/২০৫৫ ঘ.