‘বিএনপির সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই’

বিডিনিউজ২৪
Published : 21 August 2011, 09:16 AM
Updated : 21 August 2011, 09:16 AM

ঢাকা, অগাস্ট ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তার কোনো সন্দেহ নেই।

ভয়াল সেই হামলার সপ্তম বার্ষিকীতে রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, "এটা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য- সরকারের মদদ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।"

"পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিলো। তাতে কোনো সন্দেহ নেই," যোগ করেন তিনি।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার আগে ওই গ্রেনেড হামলায় দলের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ অন্তত ২৪ জন নিহত হন। আহত হয় শতাধিক মানুষ।

হামলার ধরন ও প্রচণ্ডতা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিলো এর উদ্দেশ্য। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণ ইন্দ্রীয়।

রাজনীতিতে 'সুস্থ ধারা' ফিরিয়ে আনার জন্য ওই হামলার বিচারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবেই প্রতিহত করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মেরে শেষ করে দেবো- এটা হবে না। এ জন্য ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হবে। অবশ্যই বিচার হবে। আর, এই বিচারের রায় বাংলার মাটিতেই কার্যকর হবে।"

প্রধানমন্ত্রী জানান, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে তার সরকার।

"যতো বাধাই আসুক, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।"

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "আমি বক্তব্য শেষে মাইক রেখে সিড়ির দিকে পা বাড়িয়েছি। তখন গোর্কি (যুগান্তরের প্রধান ফটোসাংবাদিক এস এম গোর্কি) আমাকে বললো, 'আপা একটু দাঁড়ান। আমি ছবি নিতে পারিনি।' আমি দাঁড়ালাম। তখনই হামলা শুরু হলো। আমার পাশে হানিফ ভাই (ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ) ছিলেন। গ্রেনেডের যে স্পি­ন্টার আমার গায়ে লাগার কথা ছিলো, তা উনার গায়ে লেগেছিলো। টপ টপ করে রক্ত আমার গায়ে পড়ছিলো।"

শেখ হাসিনা বলেন, "যে গ্রেনেড যুদ্ধের সময় শত্র"দের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, তা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলো।"

সে দিন গ্রেনেড হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। হামলাকারীদের পলায়ন নির্বিঘœœ করতেই সেদিন আহতদের উদ্ধার না করে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "ওই সময় যারা ক্ষমতায় ছিলো- তারা হামলার আলামত রক্ষা করেনি। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড আলামত হিসাবে না রেখে ধ্বংস করা হয়। কী সত্য লুকানোর জন্য- এগুলো করা হয়েছিলো?"

"এতো বড় ঘটনার বিচার না করে জজ মিয়ার নাটক সাজানো হয়েছিলো," যোগ করেন তিনি।

২১ অগাস্টের হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলামের (আদা চাচা) কথা স্মরণ করে করে শেখ হাসিনা বলেন, "প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত থাকতেন।"

বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রথমে সরকার প্রধান হিসাবে এবং পরে দলের নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পরে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত চেয়ে বিশেষ মোনাজাত হয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাহারা খাতুন, ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন।

পরে, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অস্থায়ী বেদীতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

গত ৩ জুলাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামির তালিকায় যোগ করে ২১ অগাস্ট মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। ২৫ অগাস্ট এই মামলার ধার্য দিনে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করতে পারে আদালত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/জেকে/১৩২৫ ঘ.