পতনের দ্বারপ্রান্তে গাদ্দাফি

বিডিনিউজ২৪
Published : 22 August 2011, 08:19 AM
Updated : 22 August 2011, 08:19 AM

ত্রিপোলি, অগাস্ট ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থল 'সবুজ চত্বর' এখন বিদ্রোহীদের দখলে। গাদ্দাফির ঘাঁটি বাব আল আজিজিয়া ছাড়া পুরো ত্রিপোলিই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। পাশাপাশি গাদ্দাফির দুই পুত্রকেও আটক করা হয়েছে।

গাদ্দাফির রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র ত্যাগ করে যুদ্ধ থেকে পিঠটান দিয়েছে বলে জানা গেছে।

গত রোববার রাতে গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর যুদ্ধ করার সামর্থ্য ফুরিয়ে আসলে লিবিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীর কয়েক হাজার তরুণ যোদ্ধা স্রোতের মতো ত্রিপোলির মূলকেন্দ্র 'সবুজ চত্বরে' ঢুকে পড়ে। সেখানে পৌঁছে বিদ্রোহী তরুণরা আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করে।

এ সময় ত্রিপোলির হাজার হাজার বাসিন্দা রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস করতে থাকে, তারা আশপাশে থাকা গাদ্দাফির পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।

বিদ্রোহীরা ত্রিপোলির কেন্দ্রস্থল 'সবুজ চত্বর' দখল করেই এর নাম পাল্টে 'শহীদ চত্বর' নামকরণ করে।

এর আগে, বিদ্রোহী যোদ্ধাদের একটি বহর ত্রিপোলির পশ্চিমাংশে একটি আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে।

বিদ্রোহীরা দাবি করেছে, শুধু গাদ্দাফির মূল ঘাঁটি বাব আল আজিজিয়া ছাড়া পুরো ত্রিপোলি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

বিদ্রোহীরা রোববারই জানিয়েছিলে, গাদ্দাফির দুই ছেলেকেও তারা আটক করেছে। তারা ত্রিপোলির একটি পর্যটন এলাকা থেকে গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে আল জাজিরা জানিয়েছে গাদ্দাফির বড় ছেলে মোহাম্মদ গাদ্দাফি আত্মসমর্পণ করেছেন।

আত্মসমর্পণ করার পর আল জাজিরার সাথে টেলিফোনে মোহাম্মদের কথা হয়েছে বলে দাবি করেছে সংবাদ চ্যানেলটি। তবে কথা শেষ করার আগেই একটি গুলির শব্দের সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগে তিনি জানান, তার বাড়িতে হামলা হয়েছে।

বিদ্রোহীদের র্অর্ন্তবতীকালীন জাতীয় পরিষদের প্রধান আল জাজিরাকে জানান, মোহাম্মদ অক্ষত আছেন।

তবে পুত্রদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে বিদ্রোহীদের দাবির বিষয়ে গাদ্দাফির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লিবিয়ায় ছয়মাস ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনী দুইপক্ষের মধ্যেই অচলাবস্থা চলার পর হঠাৎ করেই বিদ্রোহী বাহিনীর এ সাফল্য ব্যাপক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

বিদ্রোহীরা রোববার রাত নামার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ৩২ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে ত্রিপোলি দখল করে নেয়। নাটকীয় কয়েক ঘণ্টাতেই পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়।

ত্রিপোলির 'সবুজ চত্বর' থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক জেনিয়া খোদর জানিয়েছেন, "জনতা ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেছে। তারা সবুজ চত্বরের পুরনো নাম শহীদ চত্বর পুনর্বহাল করেছে। 'আমরা মুক্ত' বলে তারা উল্লাস করছে এবং গাদ্দাফির ছবিসহ একটি পোস্টারে গুলি ছুঁড়ছে।"

এর আগে, নিজের অনমণীয় ভাবমূর্তি বজায় রেখে গাদ্দাফি সরকারি টেলিভিশনে দুটি অডিও ভাষণ প্রচার করেন। ভাষণে তিনি লিবিয়াবাসীকে বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, "আমি ভয় পাচ্ছি, যদি আমরা ঠিকমতো প্রতিরোধ করতে না পারি, তারা ত্রিপোলি জ্বালিয়ে দেবে। তখন এখানে পানি, খাবার, বিদ্যুৎ বা স্বাধীনতা কিছুই থাকবে না।"

কিন্তু ত্রিপোলিতে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধে কার্যত তেমন তৎপরতা দেখা যায় নি। বরং বিদ্রোহী ও তাদের র্র্সমথকদের ত্রিপোলির 'সবুজ চত্বর' দখল করে নেওয়া সবাই মেনে নেয়।

টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, লিবিয়াবাসী ত্রিপোলির রাস্তায় চুমো খাচ্ছে ও উল্লাস করছে। অনেকেই দিনটিকে 'আর্শীবাদের দিন' বলে অভিহিত করে।

চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়া শাসন করছেন গাদ্দাফি। পতনের মুখে নিজের অস্ত্রাগার খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আশা, অস্ত্র নিয়ে জনগণ প্রতিরোধ করবে বিদ্রোহীদের।

বিদ্রোহীরা ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা করছেন গাদ্দাফির মুখপাত্র মুসা ইব্রাহিম। তার ধারণা, গাদ্দাফি ক্ষমতা থেকে এখন সরে গেলেও সহিংসতা বন্ধ হবে না।

সমর বিমান থেকে বোমা হামলার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের সহায়তাকারী পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো জানিয়েছে, লিবিয়ায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এবি/সিআর/১২০০ ঘ.