তদন্ত প্রতিবেদন: বেপরোয়া ছিল দুই চালকই

বিডিনিউজ২৪
Published : 22 August 2011, 03:06 PM
Updated : 22 August 2011, 03:06 PM

অনীক মিশকাত ও শামীম আহমেদ
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা, অগাস্ট ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বৃষ্টির মধ্যে মাইক্রোবাস ও বাস চালকের অসতর্ক ও বেপরোয়া চালনাকেই মানিকগঞ্জ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলীর কাছে দাখিল করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন এবং ড্রাইভিং বিষয়ে এসএসসি সমমানের পরীক্ষা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় গত ১৩ অগাস্ট ওই দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের আরোহী চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মুনীরসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন, তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলিসহ পাঁচজন আহত হন।

যোগাযোগ মন্ত্রীর নির্দেশে ওইদিনই সওজের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী (ঢাকা সড়ক সার্কেল) মো. আরিফুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তের কাজে এনভারনমেন্টাল রির্সাচ এন্ড এপ্লিকেশন সোসাইটির জ্যেষ্ঠ গবেষক মো. আশরাফুল আলম রতনের সহযোগিতা নেয় কমিটি।

বেপরোয়া ও অসর্তক চালনা

তদন্ত কমিটির প্রধান আরিফুর রহমান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দিয়েছি। এতে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে মুষলধারে বৃষ্টি এবং দুই চালকের বেপরোয়া ও অসর্তক চালনাকেই দায়ী করা হয়েছে।"

ওই রাস্তার বাঁকে 'সামান্য দোষ' পাওয়া গেছে উল্লেখ করলেও এই প্রকৌশলী বলছেন, "এ সমস্যাকে দোষ ধরলে সারা দেশে রাস্তার নকশা বদলে ফেলতে হবে।"

তিনি বলেন, "ঘটনার সময় যদি ভারী বৃষ্টি না হতো এবং মাইক্রোবাসের চালক যদি দুই-এক মিনিট সময় পেতেন, তাহলে হয়তো এ দুর্ঘটনা হতো না।"

তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সওজের কারিগরি বিভাগের (সড়ক নিরাপত্তা) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুল হক এবং মানিকগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান।

'ঝুঁকিপূর্ণ' গতি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় যে পরিমাণ বৃষ্টি ছিল তাতে এমনিতেই দৃষ্টিসীমা কমে যায়। চালক ব্রেক করলেও তার কার্যকারিতা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেও চুয়াডাঙ্গা পরিবহনের বাসটি ঘণ্টায় আনুমানিক ৭০ কিলোমিটার গতিতে গাবতলী থেকে চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছিল।

আবহাওয়ার বিবেচনায় বাসের এই গতিকে 'অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সড়কের বাঁকে এসে মাইক্রোবাসের চালক তার সামনের বাস বা ট্রাককে অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা বাসটি হয়তো দেখতে পাননি উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি বলেছে, মাইক্রোবাসের চালকের উচিৎ ছিল 'একটি বড় দূরত্ব তৈরি করে' সামনে থাকা বাস বা ট্রাকের পিছনে পিছনে যাওয়া।

ওই দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক মুস্তাফিজ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বাসচালক জামির হোসেনকে আসামি করে ওইদিনই একটি মামলা করে ঘিওর থানা পুলিশ। ১৫ অগাস্ট ভোরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়ন থেকে জমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে জামির সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, দুর্ঘটনায় তার কোনো দোষ ছিলো না, ত্র"টি ছিলো মাইক্রোবাসের চালকের।

সুপারিশ

ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্ত প্রতিবেদনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী মোট ১৪টি সুপারিশ করেছে কমিটি।

স্বল্পমেয়াদী সুপারিশে চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ, চালকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, রাস্তার 'সাইন ও মার্কিং' সম্পর্কে চালকদের জ্ঞান 'মাঝে-মধ্যে' পরীক্ষা করা এবং মহাসড়কের দুই পাশে দৃশ্যপথে বিঘœ ঘটায় এমন সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে।

মধ্যমেয়াদী সুপারিশে চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো সতর্কতা অবলম্বন এবং বাঁকগুলোতে সড়কের প্রশস্থতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে চালকদের জন্য ড্রাইভিং বিষয়ে এসএসসি সমমানের পরীক্ষা চালু এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত এলাকা চার লেনে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএনএম/এসএইচএ/জেকে/২০৪১ ঘ.