ভারতে বিরোধিতার মুখে তিস্তা পানিচুক্তি

বিডিনিউজ২৪
Published : 30 August 2011, 04:33 PM
Updated : 30 August 2011, 04:33 PM

নয়া দিল্লি, অগাস্ট ৩০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- তিস্তার পানিবণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা সমাধানে নয়া দিল্লির পরিকল্পিত অন্তবর্তীকালীন চুক্তির বিরোধিতা করছে সেখানকার বিরোধী দলগুলো।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সপ্তাহখানেক আগে এ বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় রাজ্যগুলোর বিরোধী দলগুলো।

বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের অসম গণ পরিষদ (এজিপি) নয়া দিল্লি ও ঢাকার 'দেওয়া-নেওয়ার' এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে।

তিস্তার পানিবণ্টনে অন্তর্বতী চুক্তির বিরোধিতা করেছে পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী বিরোধী জোটের একটি দল রেভুলুশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টিও (আরএসপি)। দলটি বলেছে, ভারতের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন চুক্তির বিরোধী তারা।

আরএসপি নেতা এবং ভারতীয় পার্লামেন্টের সদস্য প্রশান্ত মজুমদার বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার ৫০ ভাগ পানি ভাগাভাগি করতে সম্মত হলে ভারতের উত্তরাঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি মানুষের জীবনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

বিষয়টি স¤প্রতি তিনি ভারতের পার্লামেন্টের নিুকক্ষ লোকসভায়ও উত্থাপন করেছেন। উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বার্থ রক্ষায় তিনি মনমোহন সিংয়ের প্রতি অনুরোধ জানান।

মনমোহন সিংয়ের ৬ সেপ্টেম্বরের ঢাকা সফরে তিস্তার পানিবণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগোই ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকা সফরে আসার কথা। এই পাঁচটি রাজ্যই বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন।

আসাম, মেঘালয় ও মিজোরামে ক্ষমতায় রয়েছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যা কেন্দ্রীয় সরকারেরও নেতৃত্বে রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে মমতার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস গত মে মাসে নির্বাচনে বাম জোটকে পরাজিত করে। ওই বাম জোট ১৯৭৭ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিলো। ত্রিপুরায় ক্ষমতায় রয়েছে কম্যুনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসিস্ট) নেতৃত্বাধীন বাম জোট।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গোগোই স¤প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত জটিলতা ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান চায় নয়া দিল্লি।

তিনি বলেন, সীমান্তভূমি বিনিময়ের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভূমি পাবে।

বিরোধী দল বিজেপি ও এজিপি এর বিরোধিতা করেছে।

এজিপি'র সভাপতি চন্দ্র মোহন পাটোয়ারি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশকে এক ইঞ্চি ভূমি দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও আসামের জনগণ এর প্রাণপণ বিরোধিতা করবে।

সীমান্ত সমস্যা নিরসনে স¤প্রতি শুরু হওয়া ভূমি চিহ্নিতকরণের প্রতিবাদে সোমবার আসামের প্রধান শহর গোয়াহাটিতে বিক্ষোভও করেছে দলটি।

ভারতের পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও নয়া দিল্লির এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। আসামে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যোৎ বড়–য়া জানিয়েছেন, তারা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করবেন।

ভারতে বাংলাদেশের সাত হাজার একশ ১০ একর আয়তনের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে যেখানে প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি বাস করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের ১৭ হাজার একশ ৬০ একর আয়তনের একশ ১১টি ছিটমহল রয়েছে যেখানে প্রায় ৩৭ হাজার ভারতীয় বাস করেন।

সব মিলিয়ে ভারতে থাকা বাংলাদেশি ভূমির পরিমাণ এক হাজার একশ ৬৫ দশমিক ৪৯ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতীয় ভূমির পরিমাণ এক হাজার আটশ ৮০ দশমিক ৮১ একর।

গত বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের সময় সীমান্ত সমস্যা সমাধানে সম্মত হয় বাংলাদেশ ও ভারত। ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তিকে বিবেচনায় রেখে এ সমাধান হওয়ার কথা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/পিডি/২০৫২ ঘ.