ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- চলতি সফরে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি না হলেও এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ঢাকা-দিল্লি শীর্ষ বেঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, "অভিন্ন নদী নিয়ে বিরোধ নয়; বরং দুই দেশের সমৃদ্ধির অগ্রদূত হিসেবে এগুলো কাজ করতে পারে। উভয় দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য, ন্যায্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টনে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।"
প্রতিবেশি দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটানোর লক্ষ্য মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টায় শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান মনমোহন। ঢাকায় নামার পর ১৯ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা এলেন মনমোহন সিং।
তিনি বলেন, "২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকা সফরের পর এটি আমার দ্বিতীয় সফর। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তা দেখে আমি আভিভূত। অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ভালো করছে এবং আর্থসামাজিক পরিবর্তনও বেশ অগ্রসর হয়েছে।"
বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বোচ্চ সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের জাতীয় ঐকমত্যের কথাও জানান মনমোহন সিং।
বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ও গভীর আলোচনা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক সফরের মাধ্যমে এসব বিষয় গতি পেয়েছে।
"আমাদের অংশিদারিত্বকে একটি নতুন কাঠামো দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার হবে।"
এ সময় তিনি দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলবাসীর যাতায়াতের জন্য তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য সমস্যার বিষয়ে ভারত পূর্ণ সচেতন রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ৪৬টি পণ্যকে ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দিতে পেরে আমি আনন্দিত।"
পাশাপাশি সীমান্ত কাঠামোর উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মনমোহন বলেন, "এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে সহজে প্রবেশ করতে পারবে। অশুল্ক পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে বাধা দূর করার বিষয়েও কথা হয়েছে।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তায় ভারত অঙ্গীকারাবদ্ধ। জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া খুলনায় যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
ভারতে বাংলাদেশের প্রকৃত সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে মনমোহন সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন।
ঢাকা পৌঁছে দুপুর ১টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মনমোহন। বিকেল ৪টার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সোনারগাঁও হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন মনমোহন। সেখানে দুদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক 'রূপরেখা' চুক্তিসহ কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
তবে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানিবণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি এবং ট্রানজিট বাস্তবায়নে দুদেশের মধ্যে সম্মতিপত্র বিনিময় হয়নি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএল/পিডি/০০০৮ ঘ.