নির্মাণাধীন ভবনে ঘাস জন্মেছে

বিডিনিউজ২৪
Published : 16 Sept 2011, 10:20 AM
Updated : 16 Sept 2011, 10:20 AM

নেত্রকোনা, সেপ্টেম্বর ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ছয় বছর ধরে কাজ বন্ধ থাকায় নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনেও ঘাস জন্মেছে। অন্যদিকে পুরনো ভবনে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে রোগীদের।

প্রায় এক বছর আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির দ্রুত স¤প্রসারিত ভবনের কাজ শেষ করার প্রতিশ্র"তি দিলেও নির্মাণকাজ এগোয়নি একটুও। তবে এ সময়ে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। ফলে চিকিৎসা সেবা হচ্ছে ব্যাহত।

১৯৯২ সালে নেত্রকোনা জেলা শহরের জয়নগরে ৫০ শয্যা নিয়ে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। জেলার ২৫ লাখ মানুষের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করে সরকার, তবে অবকাঠামো বাড়েনি।

এলাকাবাসী দাবির মুখে ২০০৫ সালে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকায় স¤প্রসারিত নতুন তিন তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি পায় 'লতিফ বির্ল্ডাস' নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান।

লতিফ বিল্ডার্সের কর্মকর্তারা ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গাঢাকা দেওয়ার পর থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাহিদ উদ্দিন হোসেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ওই ভবনের দেয়ালে শ্যাওলা, মেঝেতে ঘাস জন্মেছে। রাতে সেখানে চলে মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডা।

এদিকে বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে একশ' থেকে দেড়শ' রোগী ভর্তি হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলেও পুরনো হাসপাতাল ভবনে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের বহির্বিভাগে একই কক্ষে বসে তিন/চার জন চিকিৎসককে রোগী দেখতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝেতে থাকতে হয়।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. নীলোৎপল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "হাসপাতালে স্থানাভাবের কারণে আউটডোরে রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এক রুমে তিন-চার জন চিকিৎসককে গাদাগাদি করে বসে রোগী দেখতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীদেরও সমস্যা হচ্ছে।"

কয়েক বছর আগে হাসপাতালে কিছু উন্নতমানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতিসহ একটি অত্যাধুনিক জেনারেটর আনা হলেও স্থানাভাবের কারণে সেগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান ডা. নীলোৎপল।

দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কার্যাদেশ দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের ছয় বছরে শেষ না হলেও ২০০৮ সালে নির্মাণ কাজ অর্ধেকও না করেই কাজের ৫০ ভাগ বিল তুলে নিয়ে যায় লতিফ বিল্ডার্স।

অভিযোগ রয়েছে- রাজনৈতিক বিবেচনায় লতিফ বিল্ডার্স হাসপাতাল নির্মাণের কাজটি পায়। নানা অভিযোগে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশল কার্যালয় ২০১০ সালের ১৫ জুন ওই প্রতিষ্ঠানের কাজের চুক্তিপত্র বাতিল করে।

গত বছর মার্চ মাসে নেত্রকোনা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অসমাপ্ত হাসপাতাল ভবনের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শেষ করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ হয়নি।

সিভিল সার্জন শাহিদউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "১/১১-র পর থেকে ঠিকাদাররা সব উধাও হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। এরপরে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি।"

এ ভবন নির্মাণ কবে নাগাদ শেষ হবে, অথবা আদৌ শেষ হবে কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/কিউএইচ/এমআই/০৯৫০ ঘ.