দুর্নীতির প্রমাণ দিন, ব্যবস্থা হবে: হাসিনা

বিডিনিউজ২৪
Published : 16 Sept 2011, 08:28 PM
Updated : 16 Sept 2011, 08:28 PM

ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে বাদ দেবেন তিনি।

শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার প্রারম্ভিক বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনা এবং বেহাল মহাড়কের জন্য যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের অপসারণের দাবি উঠেছে। এছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলছেন সরকারি দলের নেতারাও।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, "শহীদ মিনারে অনেকে তোলপাড় করছেন। বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন। তাদেরকে আমি বলবো দুর্নীতি দুর্নীতি না করে কোথায় কখন কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আমাকে দেখাক। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে সে মন্ত্রী থাকবে না। কারো সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে তার প্রমাণ দিতে হবে, শুধু বক্তৃতা বিবৃতি দিলে হবে না।"

চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে বিভিন্ন দুর্নীতির দিকে ইঙ্গিত করে এখন যারা সরব, তাদেরও সমালোচনা করেন তিনি।

"যারা এখন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে এতো কথা বলছেন, তাদের তো অতীতের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে দেখছি না। দুর্নীতি কীভাবে করা হয় সেগুলো তো আমরা দেখেছি।"

দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, "দুর্নীতিবাজদের বিচার অবশ্যই হবে। আন্তর্জাতিকভাবে যারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকৃত, তাদের বিচার হবে।"

মুদ্রা পাচারের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিচারের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন. "এখন তাদের (বিরোধী দল) একটাই লক্ষ্য- দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা। আন্তঃর্জাতিক পর্যায়ে তদন্তের মাধ্যমে তাদের দুর্নীতির বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। এর জন্য তো বিচার করতেই হবে। ব্যক্তি বিশেষকে তো খাতির করার কিছু নেই।"

হাসিনার বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এতে সভাপতিত্ব করেন।

উপদেষ্টাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু, এইচ টি ইমাম, আলাউদ্দিন আহমেদ এই বৈঠকে অংশ নেন। তবে তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল জলিলকে দেখা যায়নি।

'উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া'

দেশের বর্তমান সব সমস্যার জন্য বিগত চার দলীয় জোট সরকারকে দায়ী করে শেখ হাসিনা যৌথ সভায় বলেন, "জানি বর্তমানে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে, এর একটিও আমাদের সৃষ্টি করা নয়, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে এগুলো পেয়েছি। তারপরও আমরা সব সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বসে নেই।"

বর্তমানে রাস্তাঘাটের নাজুর অবস্থার জন্যও বিগত সরকারকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী।

"২০০১ সালে যখন নির্বাচনী প্রচারণায় নামি তখন প্রতিটি রাস্তা ছিলো সুন্দর ও ঝকঝকে। সব রাস্তা দিয়ে পানির মত যাতায়াত করা গেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে যখন নির্বাচনী প্রচারণায় নামি- তখন সব রাস্তা ছিল চরম খারাপ। আগের সরকার কাজ করেনি বলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।"

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার বাজেট করেছি। বর্ষার কারণে এখন কাজ করা যাচ্ছে না। শুকনো মওসুমে ভালোভাবে কাজ শুরু হবে।"

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এই দুই বছর ৯ মাসে আমরা যে পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করতে পেরেছি, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৫ বছরেও তা পারেনি; তত্ত্বাবধায়ক সরকারও দুই বছরে তা পারেনি। আমাদের স্বচ্ছতা আছে বলেই এটা পেরেছি। দুর্নীতি করলে তো পারতাম না।"

বিগত জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেনি- তার জবাব দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

গণমাধ্যমের সমালোচনা

গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদেরও সমালোচনা শোনার মানসিকতা থাকা উচিৎ।

"সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু তাদের কেউ কিছু বললে, সমালোচনা করলে সহ্য হয় না। সমালোচনা করলে তো সমালোচনা শোনার মানসিকতাও থাকতে হবে।"

শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, "পত্রিকাগুলো এমন কিছু ঘটনা নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে যাতে আমাদের ক্ষতি হয়। সমালোচনা ভালো, এতে আমরা শুধরাতে পারি। কিন্তু মিথ্যা লিখলে তো ক্ষতি হয়।"

যুদ্ধাপরাধের বিচার

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা না হলে শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই।

"চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে যখন যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের পাওয়া যাবে তখনই তার বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হলে দেশের শান্তি আসবে না। গণতন্ত্র স্থায়ী রূপ পাবে না।"

তবে বিএনপি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে চায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/জেকে/২১৪৪ ঘ.