রশিদপুরে আরো গ্যাসের মজুদ

বিডিনিউজ২৪
Published : 27 Sept 2011, 04:14 AM
Updated : 27 Sept 2011, 04:14 AM

ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে উত্তোলনযোগ্য আরো প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ নতুন করে শনাক্ত হয়েছে।

প্রথমবারের মতো ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ (থ্রিডি সিসমিক সার্ভে) করে নয়শ ৬৭ দশমিক দুই বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাসের মজুদ শনাক্ত করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।

এ মজুদ শনাক্ত হয়েছে গ্যাসক্ষেত্রটির পূর্বাংশে। এর আগে ক্ষেত্রটির পশ্চিমাংশে দ্বিমাত্রিক জরিপ চালিয়ে দুই টিসিএফ গ্যাসের মজুদ শনাক্ত করেছিল জ্বালানি বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিট।

তবে ওই অংশে প্রকতৃপক্ষে গ্যাসের মজুদ এক দশমিক ৮৭ টিসিএফ ত্রিমাত্রিক জরিপের ফলে উল্লেখ করেছে বাপেক্স।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "তিনশ ২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার পশ্চিমাংশে এক দশমিক ৮৭ টিসিএফ এবং পূর্বাংশে নয়শ ৬৭ দশমিক দুই বিসিএফ গ্যাসের মজুদ শনাক্ত করেছে বাপেক্স।"

এই প্রথম দেশের একটি প্রতিষ্ঠান গ্যাস অনুসন্ধানে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালিয়ে সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান।

সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৬০ সালে আবিষ্কার করে বিট্রিশ তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান শেল। ১৯৭৫ সালের অগাস্টে এটি পেট্রোবাংলার পরিচালনায় আসে। এ পর্যন্ত এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে চারশ ৮২ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন হয়েছে।

এ গ্যাসক্ষেত্রে আরো দুই দশমিক ৪১ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার মৃদু সম্ভাবনা রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান। উত্তোলন-ঝুঁকি বিবেচনায় ওই স্তরটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। সব মিলিয়ে রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ পাঁচ দশমিক দুই টিসিএফ।

দেশে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ২০ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে নয় দশমিক ৪৩ টিসিএফ। সে হিসেবে বর্তমানে গ্যাসের মজুদ রয়েছে ১১ দশমিক ২০ টিসিএফ।

'দৈনিক উৎপাদন ৫৫ এমএমসিএফ বাড়ানো যাবে'

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পেট্রোসেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে হোসেন মনসুর বলেন, "এর আগে দ্বিমাত্রিক জরিপ চালিয়ে জ্বালানি বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিট দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে শনাক্ত করে।"

২০১০ সালের ১১ মে বাপেক্স ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের কাজ শুরু করে এ বছরের ২ জুন শেষ করে। পরে উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ জরিপের ফল জানানো হয়।

এ গ্যাসক্ষেত্রের সাতটি কূপের মধ্যে চারটি কূপ থেকে দৈনিক ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাকি তিনটি কূপ কারিগরি ত্র"টির কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে।

হোসেন মনসুর বলেন, "বাপেক্স জরিপকালে সাতটি গ্যাসস্তর বিশ্লেষণ করে। এর মধ্যে পাঁচটি স্তর সম্ভাবনাময়।"

"বিশ্লেষণকৃত উপাত্তের ভিত্তিতে এ প্রকল্পের আওতায় তিনটি অনুসন্ধান কূপ এবং ছয়টি উন্নয়ন কূপ খনন করা হবে।"

এর মধ্যে দ্রুত তিনটি কূপ খনন করে এ গ্যাসক্ষেত্রে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন আরো ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) বাড়ানো যাবে বলে জানান পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান।

দেশে বর্তমানে দৈনিক ২৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। সে হিসেবে ঘাটতি থাকছে ৫০ কোটি ঘনফুট।

পাঁচ গ্যাসক্ষেত্রে ত্রিমাত্রিক জরিপ

দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকট মোকাবেলায় আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র কূপ খনন এলাকা চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পেট্রোবাংলার দুইটি প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) উদ্যোগে অ্যাপ্রাইজাল অব গ্যাস ফিল্ডস (থ্রিডি সিসমিক সার্ভে) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাপেক্স এ জরিপ কার্যক্রম চালায়।

হোসেন মনসুর বলেন, "এ প্রকল্পের আওতায় মোট পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে সাতশ পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাপেক্স ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালাবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে একশ ৬৪ দশমিক ৪০ কোটি টাকা।"

এ গ্যাসক্ষেত্রগুলো হলো- তিতাস, বাখরাবাদ, হরিপুর, কৈলাশটিলা এবং রশিদপুর।

এর মধ্যে রশিদপুর, হরিপুর এবং কৈলাশটিলার কাজ শেষ হয়েছে। এ তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে জরিপে ব্যয় হয়েছে এক কোটি আট লাখ ডলার।

হরিপুর ও কৈলাশটিলার ফলাফলও শিগগিরই জানানো হবে বলে জানান তিনি।

আগামী ২০১৩-১৬ সালের মধ্যে সুন্দলপুর-বেগমগঞ্জ, সুনেত্র, ফেঞ্জুগঞ্জ, সালদানদী, সেমুতাং এবং শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের পরিকল্পনা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক, অ্যাপ্রাইজাল অব গ্যাস ফিল্ডস (থ্রিডি সিসমিক সার্ভে) প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ারুর রহমান প্রমুখ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এআরআর/পিডি/২৩২৪ ঘ.