যুদ্ধাপরাধ: প্রথমে জবাব দিতে হবে সাঈদীকে

বিডিনিউজ২৪
Published : 2 Oct 2011, 06:29 AM
Updated : 2 Oct 2011, 06:29 AM

তানিম আহমেদ
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা, অক্টোবর ০২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি- যাকে আদালতে দাঁড়িয়ে বলতে হবে, তিনি একাত্তরে মনবতাবিরোধী অপরাধ করেছিলেন কি না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে সোমবার সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।

এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩১টি অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল।

অবশ্য সাঈদীর আইনজীবী তাজুল ইসলামের দাবি, অভিযোগ গঠনের এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বায়বীয় অভিযোগের ভিত্তিতে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ২০১০ সালের জুলাইয়ে প্রণিত ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে খালাস দিতে পারেন।

"আর যদি ট্রাইব্যুনালের ধারণা হয় যে, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধ করেছিলেন- এমন মনে করার সঙ্গত কারণ আছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে এক বা একাধিক অভিযোগ গঠন করা হতে পারে।"

সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩৮ দফা অনুযায়ী, অভিযুক্তকে প্রশ্ন করা হবে- তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি স্বীকার করেন কি না। তবে তার আগে সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ পড়ে শোনাতে হবে।

তাজুল বলেন, "প্রশ্ন করা হলে, তিনি (সাঈদী) স্বাভাবিকভাবেই বলবেন যে তিনি দোষী নন। তিনি হয়তো সেই সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।"

"আর আমার মক্কেল এ জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছেন", যোগ করেন সাঈদীর আইনজীবী।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এর আগেও একাধিকবার দাবি করেছেন, এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী তার বিচার করা চলে না।

এই আইনে বলা হয়েছে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা, সাক্ষী, ঘটনার দিনক্ষণ এবং বিবরণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

অবশ্য ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলছেন, একাত্তরের প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য এবং অন্যান্য আলামাত থেকে আইন অনুযায়ী বিচার চালানোর প্রয়োজনীয় ভিত্তি আদালত ঠিকই পাবেন।

আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আসামীপক্ষকে তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি সরবরাহ করা হয়েছে কি- না জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বলেন, সেগুলো ইতোমধ্যে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের আগে আসামীপক্ষকে সেসব সরবরাহ করার কোনো প্রয়োজন নেই।

সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন প্রশ্নে গত ২১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক চলে। এরপর ৩ অক্টোবর আদেশের দিন রাখে ট্রাইব্যুনাল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। চলতি বছর ১৪ই জুলাই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদী ছাড়াও জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতাসহ চার জন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার রয়েছেন। তারা হলেন-দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামরুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্ল¬া।

এছাড়া দুই বিএনপি নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ মামলায়। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আটক থাকলেও জিয়াউর রহমান আমলের মন্ত্রী আব্দুল আলীম শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/টিএ/জেকে/১১২৫ ঘ.