সড়কনির্ভর যোগাযোগ বাড়াচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি

বিডিনিউজ২৪
Published : 15 Oct 2011, 06:17 AM
Updated : 15 Oct 2011, 06:17 AM

আশিক হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

ঢাকা, অক্টোবর ১৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দেশে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেশি হওয়ার জন্য সড়কনির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দায়ী করে নৌ ও রেল যোগাযোগ প্রসারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা আরো বলছেন, রেল, নৌ, সড়ক এবং আকাশপথের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না।

বেসরকারি সংস্থা মিডিয়া ফোরাম ফর হিউমান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্টের (এমএইচইডি) এক জরিপে দেখা যায়, দেশে ২০০৯-১০ সালে রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩৯ জন। অন্যদিকে ২০০৮ সালে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৭২৩ জন এবং গুরুতর আহত হয়েছেন ৬৫৮ জন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক আখতার মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বাংলাদেশের যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হতে পারতো রেল যোগাযোগ। কিন্তু রেল নেটওয়ার্ক সে অনুপাতে বাড়েনি বলে চাপ পড়ছে সড়কের ওপর।"

যোগাযোগে বর্তমান নাজুক অবস্থা থেকে রেহাই পেতে হলে রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এমএইচইডি অপর এক জরিপে দেখা যায়, ১৮৬২ সাল থেকে ১৯৪০ পর্যন্ত বাংলাদেশে রেললাইন স্থাপিত হয়েছে ২৮৫৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার, বর্তমানে রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৮৩৫ দশমিক ০৪ কিলোমিটার।

দেশে নৌপথের পরিমাণ ৫৯৬৮ কিলোমিটার।

অন্যদিকে, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ৪৬১ দশমিক ৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক ছিলো। ৬৬ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫৬৫ কিলোমিটার।

জরিপ অনুযায়ী, রেলপথের দৈর্ঘ্য সঙ্কুচিত হলেও এ পথে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। ২০০০-০১ কার্যবছরের হিসাব অনুযায়ী যাত্রী ছিলো ৪২০ কোটি ৯০ লাখ এবং ২০১০-১১ সালের হিসাবে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬১ কোটি ১০ লাখে।

রেলপথকে সড়কপথের চেয়ে নিরাপদ দাবি করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিবছর সড়কপথে দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, যা দেশের অর্থনীতির ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ডব্লিউবি ট্রাস্টের সড়ক বিষয়ক নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা বাবদ তাদের পরিবার এবং সরকারকে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হয়। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।"

"যদি সরকার সড়কের পাশাপাশি নৌ ও রেলকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এ তিন ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমান অচলাবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব," বলেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নৌপথ ও রেলপথে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগের এ ক্ষেত্রগুলি অবহেলিত থাকার কারণে চাপ বেড়েছে সড়কপথে। সড়কের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে দুর্ঘটনা, দূষণ, জ্বালানি ব্যয়, যাতায়াত খরচ, যানজটসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো প্রকট হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক সারোয়ার জাহান বলেন, "বাংলাদেশের রেল ও নৌ যোগাযোগ অত্যন্ত বেহাল। আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে এ দুটি ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করে গড়ে তুললে যোগাযোগের অচলাবস্থা নিরসন সম্ভব। এতে সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।"

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএইচএ/কিউএইচ/এমআই/১১৩০ ঘ.