গাদ্দাফির মরণ ‘ক্রসফায়ারে’

বিডিনিউজ২৪
Published : 21 Oct 2011, 05:38 AM
Updated : 21 Oct 2011, 05:38 AM

ত্রিপোলি, অক্টোবর ২১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- 'ক্রসফায়ারে' মাথায় গুলি লেগেই মুয়াম্মার গাদ্দাফি মারা গেছেন বলে লিবিয়ার অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল দাবি করেছেন।

৪২ বছর পর ক্ষমতা হারানো লিবীয় শাসক বৃহস্পতিবার নিজ শহর সির্তে বিদ্রোহী বাহিনীর অভিযানের সময় প্রাণ হারান।

প্রথমে তাকে আটকের খবর জানানো হলেও পরে লিবিয়ার অন্তর্র্বতীকালীন পরিষদ ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি) নেতারা পরে জানান, গাদ্দাফি মারা গেছেন।

গত অগাস্টে ত্রিপোলির পতনের পর এনটিসি-ই দেশটি শাসন করছে, আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতিও ইতোমধ্যে আদায় করেছে তারা।

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জিবরিল গাদ্দাফির মৃত্যু নিশ্চিত করে ত্রিপোলিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাদ্দাফিকে সির্তে একটি সুরঙ্গ থেকে বন্দি করার পর তার অনুগত বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্র্বতী সরকারের বাহিনীর গোলাগুলির সময় মাথায় গুলি লেগে মৃত্যু হয় গাদ্দাফির।

গাদ্দাফির মৃত্যুর ঘটনাটি শুরু থেকেই ধোঁয়াচ্ছন্ন। কোনো কোনো সূত্র বলছে, পালানোর সময় ন্যাটো বাহিনীর গোলার আঘাতে গাদ্দাফির মৃত্যু হয়েছে, যদিও এনটিসি নেতারা তা নাকচ করে আসছেন। খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এমন কথাও উঠেছে।

জিবরিল বলেন, "গাদ্দাফির মৃতদেহ পরীক্ষা করে চিকিৎসক যে প্রতিবেদন দিয়েছে আমি তাই পড়ে শোনাচ্ছি- 'মাথায় একটি গুলিই তার মৃত্যুর কারণ'।"

বন্দি করার সময় গাদ্দাফির তরফ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ হয়নি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তাকে সুরঙ্গ থেকে বের করে একটি ট্রাকে তোলা হয়। ওই সময় তার ডান বাহুতে একটি মাত্র গুলির চিহ্ন ছিলো। দেহে আর কোনো গুলির ক্ষত ছিলো না।

"তাকে ওঠানোর পর যখন ট্রাকটি চলতে শুরু করে, তখন গোলাগুলি শুরু হয়। আর তখনি গাদ্দাফির মাথায় একটি গুলি লাগে," বলেন তিনি।

তবে কাদের গুলিতে গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেননি জিবরিল। তিনি বলেছেন, যখন বন্দি করা হয়, তখন গাদ্দাফি জীবিতই ছিলেন। এর কয়েক মিনিটের মাথায় 'ক্রসফায়ারে' পড়ে মৃত্যু হয় তার।

গাদ্দাফির সঙ্গে তার বড় ছেলে মোতাসসিম নিহত হন বলে জিবরিল জানান। তিনি বলেন, "গুলিতে তার মাথার খুলি উড়ে যায়। তার দেহের পেছনের অংশে পাঁচটি এবং ঘাড়ে একটি গুলি লাগে।"

অগাস্টে এনটিসি বাহিনী রাজধানী ত্রিপোলিতে বাব আল আজিজিয়া প্রাসাদ দখল করার পর গাদ্দাফি ছেলেদের নিয়ে জন্মস্থল ভূমধ্যসাগর কূলের শহর সার্তে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

৪২ বছর দাপটের সঙ্গে শাসন করে এলেও এ বছরের শুরুতে আরব গণজাগরণের ঢেউয়ে গাদ্দাফির ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। তার ধারাবাহিকতায় ঘটে পতন।

অগাস্টে ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে সির্তের দিকে এগোতে থাকে এনটিসি বাহিনী। বুধবার ওই শহরে ঢুকে পড়ে তারা।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ন্যাটো বাহিনী বিমান হামলা শুরু করে। আর তখন এনটিসি বাহিনীও গাদ্দাফিতে ধরতে অভিযান শুরু করে। দুপুরে বন্দি করা হয় গাদ্দাফিকে।

গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো। প্রধানমন্ত্রী জিবরিল জানিয়েছেন, ডিএনএ টেস্টের জন্য গাদ্দাফির দেহ থেকে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত চেয়েছে যেন দাফনের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে গাদ্দাফির মৃতদেহ পরীক্ষা করা হয়।

"আর আমরা যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি, তাতে সন্তষ্ট হয়েছে তারা," বলেন জিবরিল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআই/১১০৫ ঘ.

_________________
সংবাদটি পাঠকের মন্তব্যের জন্য ব্লগে শেয়ার করা হলো। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফর ডটকম ব্লগ একটি সিটিজেন জার্নালিজম ভিত্তিক ব্লগ। এ সংবাদটি সম্পর্কে আপনার কোনো প্রতিক্রিয়া থাকলে লিখতে পারেন স্বতন্ত্র পোস্টে। পডকাস্ট করতে পারেন অডিও, ভিডিও মাধ্যমে। কোনো পরামর্শ বা অভিযোগ থাকলে যোগাযোগ করুন ফেসবুক গ্রুপে