ঢাকা, নভেম্বর ১৮ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ভারতে বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তি করেছে মণিপুর রাজ্য সরকার।
চুক্তিপত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংয়ের উপস্থিতিতে সে দেশের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম- এনএইচপিসি, রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ সংস্থা এসজেভিএন এবং মণিপুর সরকারের মধ্যে এই চুক্তি হয়। এর আওতায় একটি যৌথ মালিকানার কোম্পানি হচ্ছে, যার কাজ হবে টিপাইমুখ বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা।
হাইড্রোওয়ার্ল্ড ডটকম জানিয়েছে, গত ২২ অক্টোবর নয়া দিল্লিতে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, নতুন কোম্পানিতে এনএইচপিসির ৬৯ শতাংশ মালিকানা থাকছে। এছাড়া এসজেভিএন ২৬ শতাংশ এবং মণিপুর সরকার ৫ শতাংশের মালিক হচ্ছে।
ভারত টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর বাংলাদেশে ২০০৮-২০০৯ সময়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিপাইমুখে বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মনমোহন সিং প্রতিশ্র"তি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পদক্ষেপ টিপাইমুখে নেওয়া হবে না।
তবে মণিপুর রাজ্য সরকারের সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী এন বীরেন সিংকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, "সরকারের নীতি খুবই পরিষ্কার, টিপাইমুখ প্রকল্প হবেই। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায়, বিশেষ করে উত্তরপূর্ব ভারত উন্নয়ন দপ্তর এর জন্য টাকা দেবে।"
টিপাইমুখ প্রকল্পকে ভারতের জাতীয় প্রকল্প ঘোষণার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও বিবিসিকে জানিয়েছেন বীরেন সিং।
বাংলাদেশে বিরোধী দল, বিভিন্ন বাম সংগঠন ও পরিবেশবাদীরা টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সেচ্চার হলে ২০০৯ সালের অগাস্টে একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মণিপুরে যায়। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তাদের হেলিকপ্টার টিপাইমুখে নামতে পারেনি।
টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন মণিপুরের গবেষক ও পরিবেশবিদরাও। তারা বলছেন, টুইভাই ও বরাক নদীর সংযোগস্থলের টিপাইমুখ গ্রামে জলাধার ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বিরাট এলাকার পাহাড় ও বন ডুবে যাবে। এতে একদিকে প্রাণী বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে, অন্যদিকে বহু মানুষ তাদের বসতভিটা ও জীবিকা হারাবে।
তাছাড়া মণিপুরের ওই এলাকাটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ায় ভূতত্ত্ববিদরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, টিপাইমুখে বাঁধ দেওয়ার পর সেটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আসাম ও বাংলাদেশের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
ভারতে টিপাইমুখ প্রকল্পবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা রামানন্দ ওয়াংখেইরাকপাম চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরোধিতার মূল কারণ ছিল স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভাটি অঞ্চলের অর্থাৎ আসাম ও বাংলাদেশের মানুষ। এইসব মানুষের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই প্রকল্প রূপায়নের চেষ্টা হচ্ছিল। এখনও তা না করে আবারও নতুন চুক্তি সই করার মধ্যে কোনও যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"
এনএইচপিসি বলছে, টিপাইমুখ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বরাক নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণও করা যাবে। এ প্রকল্পের বাঁধ হবে ১৬২ মিটার উঁচু। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি ইউনিটের প্রতিটি থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
বিবিসি জানিয়েছে, চুক্তির আওতায় যৌথ কোম্পানি হওয়ার আগেই টিপাইমুখে একটি জরিপ চালাচ্ছে ভারতের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন। টিপাইমুখ প্রকল্পের ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য সড়ক ও সেতু নির্মাণ এবং জলাধারসংলগ্ন জাতীয় মহাসড়ক ডুবে গেলে নতুন সড়ক কোথায় নির্মাণ হবে, তার পরিকল্পনা করাই এ জরিপের উদ্দেশ্য।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/জেকে/০৯৩০ ঘ.