প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন: মোশাররফ

বিডিনিউজ২৪
Published : 19 Nov 2011, 04:50 PM
Updated : 19 Nov 2011, 04:50 PM

ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, শেখ হাসিনা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অসত্য কথা বলছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় এক আলোচনা সভায় এই বিএনপি নেতা বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মনে হচ্ছে- তিনি দেশের মানুষকে বোকা মনে করেন। ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট চলছে। সরকার ঋণ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও কমে গেছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন, উল্টো কথা।"

শনিবার সমবায় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "আমি আপনাদের জানাতে চাই- অর্থনৈতিক অবস্থা প্রকট হয়নি। আমরা অর্থনীতি সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্বেও আমরা অনেক ভালো জায়গায় আছি।"

দেশে তারল্য সঙ্কট নেই দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "অনেকে বলেন- অর্থ নেই, অর্থ নেই। মোবাইল ফেনের লাইসেন্স রিনিউ করে আমরা অনেক হাজার কোটি টাকা পেয়েছি। কয়েক মাস পর আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা আসবে।"

এর প্রতিক্রিয়ায় সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, "প্রতিদিন ব্যাংক থেকে গড়ে ১৩৩ কোটি টাকা ধার নিয়ে দেশ চালাচ্ছে সরকার। যেখানে পুরো বছরে নেওয়ার কথা ১৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে গত কয়েক মাসেই ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। কিন্তু এরইমধ্যে তা ১২ শতাংশের কাছাকাছি উঠেছে।"

দেশের অর্থনীতির এই অবস্থাকে 'সঙ্কটজনক' উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন করতে না পারলে সরকার বদল ছাড়া দেশ রক্ষা করা যাবে না।

"সেজন্য গণ অভ্যুত্থান সৃষ্টি সরকারকে বিদায় করতে হবে", যোগ করেন মোশাররফ।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিএনপি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। শনিবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কেকে কেটে তার জন্মদিন পালন করবে দলটির নেতা-কর্মীরা।

তারেককে 'ভবিষ্যৎ নেতা' অভিহিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, "বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমানকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। তা পারেনি, তবে তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করা হয়েছে।"

তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে 'এই ফ্যাসিস্ট' সরকারকে হটাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফখরুদ্দীন আহমদ বিদেশি পাসপোর্টধারী হয়েও কীভাবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মোশাররফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিদেশি পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী বা সমমর্যাদার পদে বসতে পারে না। এটা অসাংবিধানিক।

তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, "তিনি আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা। আজ তার শুভ জন্মদিনে আমরা ভারাক্রান্ত এজন্য যে, অনেক অসুস্থ অবস্থায় তিনি (তারেক) সুদূর লন্ডনে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।"

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেককে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যান। চলতি বছর ৮ অগাস্ট অর্থ পাচার মামলায় তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর তাকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।

"তিনি অনেক বছর বেঁচে থাকুন, দীর্ঘ জীবন লাভ করুন। তার জন্মদিন শুভ হোক- এই কামনা করছি আমরা," বলেন ফখরুল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, "বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৪টি মামলার পরও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস, মিথ্যা মামলা দিয়ে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা কমানো যাবে না। একদিন তিনিও এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন।"

এ জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানান সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ এই আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএম/জেকে/২০২৪ ঘ.