রেমিটেন্সের পথ ধরে আসছে এইচআইভিও

বিডিনিউজ২৪
Published : 2 Dec 2011, 11:19 AM
Updated : 2 Dec 2011, 11:19 AM

নুরুল ইসলাম হাসিব
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

ঢাকা, ডিসেম্বর ০২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়তা করছেন, যথাযথ সচেতনাতামূলক কর্মসূচির অভাবে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার হার তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

সরকারের এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর দেশে ৪৪৫ জনের দেহে এইডসের জন্য দায়ী ভাইরাসের (এইচআইভি) সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের মধ্যে ১৩৮ জনই বিদেশ ফেরত কর্মী। আর সংক্রমিত নারীদের মধ্যে ৯৪ জনই প্রবাসী কর্মীদের স্ত্রী।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি কর্মীরা কেবল ২০১০-১১ অর্থবছরেই ১১.৫৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যাদের এইডস বিষয়ে সচেতন করা যাচ্ছে না যথাযথ উদ্যোগের অভাবে।

এইচআইভি সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা 'আশার আলো'র নির্বাহী পরিচালক হাবীবা আক্তার বলেন, "বিদেশ যাওয়ার আগে এ বিষয়ে (এইচআইভি) শ্রমিকদের সচেতন করার জন্য কোনো কর্মসূচি দেশে নেই।"

"বিদেশে যাওয়ার আগেই এ রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে তাদের অনেকেই আক্রান্ত হতেন না", মত দেন এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি জানান, কিছুদিন আগে আব্দুল ওয়াহাব (ছদ্মনাম) নামে এক ব্যক্তির দেহে এইচআইভির সংক্রমণ সনাক্ত করা হয়। পরে দেখা যায়, তার স্ত্রী-সন্তানদের দেহেও প্রাণাঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে।

এক সময় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কাজ করতেন ওয়াহাব। এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়টি জানার পর একটি সংস্থার তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন তিনি। প্রচণ্ড হতাশ ওয়াহাব জনসম্মুখেও আসছেন না।

"এমনিকে অভিবাসন বা বিদেশ গমন কখনোই এইচআইভি সংক্রমণের কারণ হতে পারে না। কিন্তু বিদেশে তারা অবস্থায় যে পরিবেশে কাজ করেন, সেটাই তাদের জীবনকে এইচআইভির ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।" বলেন হাবীবা।

এ ধরনের কোনো কর্মীর দেহে এইচআইভির সংক্রমণ ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এতে করে তাদের পরিবার ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতিও।

"এ বিষয়টি সরকারকে বোঝানোর জন্য গত ১০ বছর ধরে চেষ্টা করছি আমরা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি", বলেন এইচআইভি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা বিদেশ থেকে সংক্রমিত হয়ে দেশে আসার পর অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে স্ত্রীদের মধ্যেও এই মারণব্যধি ছড়িয়ে দেন।

বিদেশে যাওয়ার আগেই এ রোগের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন করা গেলে যে ফল পাওয়া যায়- তার উদাহরণ নজরুল দিলেন জাতিসংঘ শান্তি মিশনের অভিজ্ঞতা থেকে।

তিনি জানান, ১৯৯৫ সালের আগে বিদেশে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কর্মরত তিন বাংলাদেশি সেনা সদস্যের দেহে এইচআইভির সংক্রমণ ধরা পড়ে। কিন্তু সরকার শন্তিরক্ষীদের বিদেশ যাত্রার আগে এইচআইভি সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় শন্তি মিশনের বাংলাদেশিদের মধ্যে আর এইচআইভি ধরা পড়েনি।

"বিদেশে যাওয়ার আগে মাত্র এক ঘণ্টার একটি কর্মশালা এবং এইচআইভি সচেতনতামূলক তথ্য সম্বলিত একটি পকেট দিয়ে দেওয়া গেলেই তাদের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব", বলেন নজরুল।

তিনি বলেন, এবারের বিশ্ব এইডস দিবসের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী সরকার নতুন করে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিদেশগামী কর্মীদের সচেতন করার ব্যাপারে এখনই উদ্যোগী হতে হবে।

এ বিষয়ে 'জাতীয় এইডস কর্মসূচি'র ব্যবস্থাপক ডা. এস এম ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এ ব্যাপারে কাজ করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।"

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে এইডস দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক জানান, চলতি বছর দেশে অন্তত ৮৪ জন এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৪৪৫ জনের দেহে এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়ার পাশাপাশি এইডসে আক্রান্ত আরো ২৪১ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে এ বছর।

নবম এইচআইভি সার্ভিল্যান্স প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পুরুষ, ৩৩ শতাংশ নারী এবং ২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৩৩ জনে। আর এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ১০১ জন হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এনআইএইচ/আরআরডি/জেকে/১৫০৬ ঘ.