ফিরে দেখা ২০১১ তত্ত্বাবধায়কে ইতি, দুই ভাগ হলো ডিসিসি

বিডিনিউজ২৪
Published : 31 Dec 2011, 05:54 AM
Updated : 31 Dec 2011, 05:54 AM

মঈনুল হক চৌধুরী
বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঢাকা, ডিসেম্বর ৩১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে বিদায়ী বছর সংসদ অনেকটা নিরুত্তাপ থাকলেও সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভাগ উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এছাড়া নয় বছর পর বিদায়ী বছরেই পাস হয়েছে বেসরকারি একটি বিল। বহুল আলোচিত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ বিলও পাস হয় এই বছর।

টানা সংসদ বর্জনের পাশাপাশি সদস্য পদ 'রক্ষায়' এই বছর সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলো বিরোধী দল। বিরোধী দলের সদস্যরা কিছুদিন সংসদে এলেও মাত্র এক দিন এসেছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। সেদিনও ওয়াক আউট করেন তিনি।

বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে পুঁজিবাজার ও বেহাল মহাসড়ক নিয়ে সংসদে সরকারের সমালোচনায় মুখর হন সরকারি দলের সদস্যরা।

বিদায়ী বছরে নবম ও একাদশ অধিবেশনটি ছিলো সংসদের সবচেয়ে আলোচিত অধিবেশন।

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যোগ হওয়ার ১৫ বছর পর গত ৩০ জুন নবম অধিবেশনে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ইতি ঘটে অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার ব্যবস্থার। ২৯১:১ ভোটে পাস হয় এই বিল। বিলে বিরুদ্ধে ভোট দেন একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিম।

মহাজোটের তিন প্রধান শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও ন্যাপের ছয় জন সংসদ সদস্য মূল বিল পাসের পক্ষে ভোট দিলেও সংশোধনী প্রস্তাব বাতিলের বিভক্তি ভোটের সময় 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহ ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি' রাখার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে 'নোট অব ডিসেন্ট' দিয়ে স্বাক্ষর করেন।

এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে '৭২ এর সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সংবিধানে পুনঃস্থাপিত হয়। সেই সঙ্গে এই ভূখণ্ডের মানুষের জাতীয় পরিচয় বাঙালি আবার ফিরে আসে। তবে সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠী আদিবাসী স্বীকৃতি চাইলেও তা বিলে আসেনি।

সংসদে না গেলেও এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের এই বিল নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বাইরে থেকেই সমালোচনা করে আসছিলো।

পঞ্চদশ সংশোধনীর পর একাদশ অধিবেশনে আলোচিত হয়ে ওঠে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ করার বিল নিয়ে। 'স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) বিল, ২০১১' গত ২৯ নভেম্বর পাস হয় স্বল্প সময়ে। বিএনপির দাবি, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে সরাতেই ডিসিসি ভাগ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে হরতালও করে দলটি।

নতুন আাইনে নির্বাচিত প্রতিনিধি না হওয়া পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনের বিধান বাতিল করা হয়। এক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, যার সমালোচনা করে আসছে বিরোধী দল থেকে রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষক।

একাদশ অধিবেশনেই পাস হয় বহুল আলোচিত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ বিল। এছাড়াও দীর্ঘ নয় বছর পর এই অধিবেশনে কুসংস্কার থেকে কুষ্ঠ রোগীদের রক্ষায় পাস হয় একটি বেসরকারি বিল।

মন্ত্রীদের সমালোচনায় সরকারি দল

মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে এই বছরে সংসদে কয়েকবারই উত্তপ্ত বিতর্ক হয়। এছাড়াও সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পুঁজিবাজার নিয়ে 'অতিকথনের' জন্য এবং বেহাল সড়ক পরিস্থিতির জন্য তুমুল সমালোচিত হন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।

সংসদ সদস্যদের পর গত ২১ জুন বাজেট আলোচনায় মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্পিকার আবদুল হামিদও। তার মন্তব্য ছিলো- "১৪ আনা মন্ত্রীর অনুপস্থিতি দুঃখজনক"।

বিরোধী দলের বর্জন

নবম জাতীয় সংসদের ১১টি অধিবেশনের মোট কার্যদিবস ছিলো ২৫৪। এর মধ্যে চারদলীয় জোটের সদস্যরা গড়ে উপস্থিত ছিলেন ৫৪ কার্যদিবস। অবশিষ্ট ২০০ কার্যদিবসই তারা ছিলেন অনুপস্থিত।

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা বর্তমান সংসদে উপস্থিত ছিলেন এই পর্যন্ত ৬ কার্যদিবস। ১১টি অধিবেশনের মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ অধিবেশনে পুরোপুরিই অনুপস্থিত ছিলো বিরোধী দল।

পঞ্চম অধিবেশনে বিএনপি যোগ দেয় মাত্র এক দিন। টানা ৭৪ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকার পর চারদলীয় জোটের সদস্যরা সংসদে ফেরেন গত ১৫ মার্চ, যা ছিল অষ্টম অধিবেশনের ২৯তম কার্যদিবস। আইন অনুযায়ী, ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সংসদ সদস্যপদ হুমকির মধ্যে পড়ে।

১৫ মার্চ বিরোধীদলীয় নেতা সরকারের সমালোচনা করে সংসদে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। আর ওই অধিবেশনের শেষ দিন ২৪ মার্চ ওয়াকআউট করার পর তারা আর সংসদে ফেরেননি।

সংসদ বর্জন প্রসঙ্গে বিরোধী দল বরাবরই বলে আসছে, সংসদে তাদের কথা বলার 'পরিবেশ' নেই। স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

তিন বছরে বর্তমান সংসদে অনেক কাজ হয়েছে। দেড় শতাধিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো প্রথম অধিবেশন থেকেই সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/এমআই/১১৪০ ঘ.