কুমিল্লায় ইভিএমে চলছে ‘ভোট উৎসব’

বিডিনিউজ২৪
Published : 5 Jan 2012, 04:34 AM
Updated : 5 Jan 2012, 04:34 AM

কুমিল্লা ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- প্রথমবারের মতো নগরপিতা নির্বাচনে উৎসবের আমেজে ভোট দিচ্ছে কুমিল্লাবাসী। দেশে এটাই প্রথম নির্বাচন যেখানে ব্যালট পেপারে সিল দেওয়ার কোনো বিষয় নেই, পুরো ভোটগ্রহণ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট শুরু হয়েছে। নির্বিঘেœ ভোটদানের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"

বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনে অংশ নেবেন প্রায় পৌনে ২ লাখ ভোটার। নির্বাচন উপলক্ষে কুমিল্লায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা রয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে কুমিল্লার টাউন হলে।

এবারই প্রথম পুরো সিটি কর্পোরেশনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ায় ফলও দ্রুত ঘোষণা করা যাবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।

প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই কেন্দ্রে আসতে শুরু করেন ভোটাররা। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা মডার্ন স্কুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা গাজী আল আমীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা সময়মতোই ভোট শুরু করতে পেরেছি। নতুন প্রযুক্তিতে ভোট হলেও কোনো সমস্যা হয়নি। সব প্রার্থীর এজেন্টরাও কেন্দ্রে আছেন।"

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। শহরের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় নারী ভোটারের উপস্থিতিই বেশি। পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার বেশি দেশের সবচে ছোট এই সিটি কর্পোরেশনে।

মেয়র ও কাউন্সিলর মিলিয়ে এ নির্বাচনে প্রার্থীর তিন শতাধিক হলেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মেয়র পদটিই। এ পদে নয় জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজল খান এবং বিএনপি থেকে অব্যাহতি নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকা মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফজল সকাল ৯টা ২০ এ কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু। আমার পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।"

ফল যাই হোক, মেনে নেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে আপত্তি জানিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও কুমিল্লা বিএনপির নেতা ও পৌরসভার সাবেক মেয়র সাক্কু নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন হাঁস প্রতীক নিয়ে।

সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের উত্তর চর্থার হোচ্ছামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক আমি মেনে নেব। কিন্তু ভোটাররা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন।"

বর্তমান ইসির অধীনে সর্বশেষ বড় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আরো একটি মডেল নির্বাচন উপহার দিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের বিনা বাধায় ভোটদান ও বাড়ি ফিরতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।"

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বাতেন জানান, ২৭টি ওয়ার্ডে ৬৫টি ভোট কেন্দ্রে ৪২১টি ভোট কক্ষে ভোট চলছে কুমিল্লায়।

ইভিএম নিয়ে আগ্রহ

চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জে আংশিক হলেও গত ২২ নভেম্বর কুমিল্লার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়ই বলা হয়েছিলো, এতে ব্যালট পেপার ব্যবহার হবে না। পুরোটাই হবে ইভিএমে।

এর ফলে স্থানীয়দের এক প্রস্তুতিও ছিলো, পাশাপাশি যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট দিতে আগ্রহও দেখা গেছে বেশ।

কুমিল্লা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সব ধরনের কাজের সমন্বয় করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইসিটি) পরিচালক অধ্যাপক লুৎফুল কবীর।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সবকটি কেন্দ্রে ইভিএম স্থাপন করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক সব ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও মহড়ার সুযোগ থাকায় শতভাগ সফলতা আসবে এবার।"

কুমিল্লায় ইভিএম সফল হওয়ার পর বড় পরিসরে যাত্রার পথ আরো সুগম হবে বলে মনে করেন লুৎফুল কবীর।

প্রার্থী যারা

এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আফজল খান আনারস, নাগরিক কমিটির ব্যানারে মনিরুল হক সাক্কু হাঁস, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহমেদ সেলিম টেলিভিশন, আওয়ামী লীগ নেতা নূর উর রহমান তানিম চশমা, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু জাহাজ, জাসদের শিরিন আক্তার তালা, চঞ্চল কুমার ঘোষ ঘোড়া, মো. সালমান সাঈদ দোয়াত-কলমর এবং মামুনুর রশিদ কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এর মধ্যে মামুন শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তবে ভোটিং মেশিনে তার নাম থাকবে।

আফজাল কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুল, সাক্কু উল্টরা চর্থার হোচ্ছামিয়া হাই স্কুল, সেলিম ইসলামিয়া আদর্শ বিদ্যালয়, তানিম ভিক্টোরিয়া কলেজ, মিঠু অশোকতলা ইসহাক প্রাইমারি স্কুল ভোট কেন্দ্রে ভোট দেবেন বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা

ভোটাররা যাতে বিনা বাধায় ভোট দিতে পারেন, সে জন্য নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সুযোগ না থাকলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় তিন হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে কুমিল্লায়। এর মধ্যে এক হাজার র‌্যাব সদস্য।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতেন জানান, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ জন করে সদস্য থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র থাকবে ২৪ জন। ২৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে টহলে থাকবে র‌্যাব।

এই প্রথম কেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরেও কেন্দ্র প্রতি ৫ জন করে অ্যাকশন ফোর্স রাখা হচ্ছে। এছাড়া ওয়ার্ড প্রতি থাকছে একজন করে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক।

ভোটগ্রহণের পুরোপ্রক্রিয়া ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ধারণ করা হবে। এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ৬৫টি কেন্দ্রে ১৩০ জন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী হাকিম নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য দায়িত্বরত থাকবেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২৭ ওয়ার্ডে ইসির ২৭ জন গোপন পর্যবেক্ষক কমিশনকে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেবে। কোথাও অনিয়ম দেখলে এ গোপন পর্যবেক্ষকরা তাৎক্ষণিকভাবে তা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবে।

নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। দায়িত্বে গাফিলতি করলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ করা হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেন নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন।

নির্বাচনী তথ্য

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে একজন মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৯ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ইসির উপসচিব ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন। তার সঙ্গে থাকছেন নয় জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকছে প্রায় তিন হাজার।

আয়তনের দিক দিয়ে কুমিল্লাই দেশের সবচে ছোট সিটি কর্পোরেশন। এখানে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭৪ জন।

৬৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪২১টি ভোটকক্ষে সকাল ৪টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে নয় জন, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/এসআই/জেকে/১০১৫ ঘ.