মধুসূদন কাঁদলেন, কাঁদালেন

বিডিনিউজ২৪
Published : 1 Feb 2012, 11:00 AM
Updated : 1 Feb 2012, 11:00 AM

ঢাকা, ফেব্র"য়ারি ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- যুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসে বুধবার আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন অশীতিপর মধুসূদন ঘরামী, যিনি একাত্তরে ধর্মান্তরিত হয়েও রক্ষা করতে পারেননি স্ত্রীর সম্ভ্রম।

অসুস্থ মধুসূদনকে বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকের উপস্থিতিতে 'সিক বেডে' শুয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি। এ সময় তার গায়ে কম্বল জড়ানো ছিলো।

এ মামলার ২৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে মধুসূদন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, একাত্তরে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পরিচিত ছিলেন দেলাওয়ার সিকদার নামে।

"কৃষ্ণ সাহা, ডা. গণেশ আর আমাকে মসজিদে বসিয়ে এই দেলাওয়ার মুসলমান বানায়। তখন আমার নাম রাখে আলী আশরাফ, কৃষ্ণ সাহার নাম হয় আলী আকবর।"

ধর্মান্তরিত হয়েও বাঁচতে পারেননি কৃষ্ণ সাহা। কয়েকদিন পর তাকে হত্যা করে রাজাকার বাহিনী, যে সংগঠন গড়ে উঠেছিল সাঈদীর নেতৃত্বে।

"অথচ দেলাওয়ার বলেছিল, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে কাউকে মারা হবে না", যোগ করেন তিনি।

একাত্তরে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, অন্তত নয় জনকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং একশ থেকে দেড়শ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে সাঈদীর বিরুদ্ধে, যাকে একাত্তরে তার এলাকার লোকজন 'দেইল্লা রাজাকার' নামে চিনতো।

'আমার চিন্তা করো না, পালাও'

একাত্তরে নিজে ধর্মান্তরিত হয়েও স্ত্রীর সম্ভ্রম বাঁচাতে পারেননি মধুসূদন। যুদ্ধ শেষে তার স্ত্রী একটি শিশুরও জন্ম দেন। সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী ভারতে চলে যাওয়ার পর একা দেশে রয়ে গেছেন আশি পেরুনো এই বৃদ্ধ।

ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেন, "একদিন বিকেলে ঘরে এসে জানতে পারি ৪টা কি সাড়ে ৪টার দিকে বাড়িতে রাজাকাররা এসেছিলো। স্ত্রী আমাকে বলে, 'তোমাকে যে (সাঈদী) মুসলমান করেছিলো সে এসেছিলো। আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, এর বেশি আমি বলতে পারছি না। আমার চিন্তা করো না, তুমি পালাও।'"

সিক বেডে শুয়ে জবানবন্দি দেওয়ার সময় এ পর্যায়ে এসে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন সাঈদীর রাজাকার বাহিনীর নির্মমতার শিকার মধুসূদন। তার দুই চোখ দিয়ে তখন অশ্র" ঝরছিলো। মধুসূদনের কান্নায় স্তব্ধ এজলাসকক্ষে অনেকের চোখই ভিজে ওঠে তখন।

মধুসূদন আবার থেমে থেমে বলতে শুরু করেন। বলতে থাকেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্য।

"যুদ্ধ শেষে আমার স্ত্রীর একটি কন্যা সন্তান হয়। আমি তার নাম রাখি সন্ধ্যা। স্ত্রীকে লোকজন গঞ্জনা দিলে, অপবাদ দিলে আমি আমার শ্যালককে বলি কি করবা? তখন শ্যালক বলে, ভারতে নিয়ে যাই। কিছুদিন পর আমার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্যালক ভারতে চলে যায়। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।"

এ কথা বলে আবারও কন্নায় ভেঙে পড়েন মধুসূদন ঘরামী।

জবানবন্দির সময় প্রসিকিউশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত মধুসূদনকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ও মঞ্জুর আহমেদ অনসারী তাকে জেরা করেন।

গত ৩ অক্টোবর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জামায়াতে নায়েবে আমীর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক এই সংসদ সদস্যকে। চলতি বছর ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

সাঈদী ছাড়াও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্ল¬¬া এবং দলটির সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা চলছে।

এছাড়া একই অভিযোগের মামলায় বিএনপির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাগারে এবং জিয়াউর রহমানের আমলের মন্ত্রী আব্দুল আলীম শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/টিএ/এএল/জেকে/১৫৪৭ ঘ.