‘রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সতর্ক হতে হবে’

বিডিনিউজ২৪
Published : 12 Feb 2012, 05:20 PM
Updated : 12 Feb 2012, 05:20 PM

ঢাকা, ফেব্র"য়ারি ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজনীতিকরা ভুল করছেন মন্তব্য করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী তাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ এর এক বছর পূর্তিতে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "তারা (রাজনীতিক) অন্য অনেক বিষয়ের মতো গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দায়িত্বহীনতা এবং অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।

"এতে সমাজের ক্ষতি হয়েছে, অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষতি হয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্ষতি হয়েছে।"

তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প এখন পর্যন্ত আধুনিক সমাজে নেই উল্লেখ করে সর্তকতা উচ্চারণ করেন তিনি।

তৌফিক খালিদী বলেন, "যখনই অন্য কোনো শক্তি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করেছে কিংবা করবার চেষ্টা করেছে, তখনই সমস্যা হয়েছে। দেশ, সমাজ পিছিয়ে গেছে। আইনের শাসনভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কিংবা যেটুকু আছে তা আরো শক্তিশালী করবার জন্য রাজনীতির পাটাতনটা আরো শক্ত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।"

"এই বিষয়টি না বুঝলে বাংলাদেশকে আরো মাশুল দিতে হবে, যেমনটা দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান," সতর্ক করেন তিনি।

পাবলিক লাইব্রেরি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঢাকার বাইরে থেকেও ব্লগাররা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগ এর নির্বাচিত লেখা নিয়ে প্রকাশিত 'নগর নাব্য' প্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

এছাড়া 'নাগরিক সাংবাদিক সম্মাননা পুরস্কার' দেওয়া হয় ১০ জন ব্লগারকে। এছাড়াও অন্য তিন জন ব্লগারকে 'বিশেষ পুরস্কার' দেওয়া হয়।

দেশের প্রথম অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর ব্লগ চালুর প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, "এক বছর আগে যখন নতুন করে এই ব্লগ শুরু করেছিলাম, তখনই বলেছিলাম, এটি অন্য পাঁচটি ব্লগ এর মতো হবে না।"

"এখানে ব্লগাররা শুধুই তাদের মতামত দেবেন না, শুধুই অন্য কোনো ঘটনা, কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবেন না, তারা তথ্যও দেবেন। তারাও এক ধরনের সাংবাদিকতা করবেন।"

এই প্রসঙ্গে বহু ব্যবহারে প্রবাদের মতো হয়ে ওঠা ইংরেজি বাক্য 'কমেন্ট ইজ চিপ, ইনফরমেশন ইজ এক্সপেনসিভ' সবাইকে মনে করিয়ে দেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক।

প্রযুক্তির কল্যাণে এখন তথ্য পরিবেশনের কাজ সহজ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, "তথ্য যোগাড়ের যে কাজটি, তথ্য যাচাই বাছাই করার যে কাজটি, সেটি আমার ধারণা একটু কঠিন কাজ। সেখানে দায়িত্বশীলতার প্রশ্ন এসে যায়, সেখানে সতর্ক হবার প্রয়োজন আছে।

"এখানে দায়িত্বশীল হতে হবে দুই পক্ষকেই, আপনারা নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে তথ্য দেবেন এবং সেই সঙ্গে যারা এ প্রান্ত থেকে আরেক জোড়া চোখ দিয়ে যাচাই করে দেখবেন। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, দায়িত্বশীল আচরণ করতে ব্যর্থ হলে মাশুল গুনতে হবে সবাইকে।"

তৌফিক খালিদী বলেন, আইন বা বিধিবিধানের বিষয়টি তখনই সামনে আসে যখন স্বাধীনতার অপব্যবহার হয়। স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা হয়।

"আমাদের সতর্ক থাকবার প্রয়োজন আছে। ইন্টারনেটে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অসতর্কতার পরিণতিতে সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে। বেশি দূর যেতে হবে না, বাংলাদেশের গত ৪০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে বিভিন্ন সময়ে কীভাবে গণবিরোধী কাজে কিংবা আইনের শাসনবিরোধী কাজে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ইতিহাস থেকে শিখি না, শিখতে চাই না," বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক আফসান চৌধুরী বলেন, "দায়িত্বশীল হয়ে লিখলে আমরা ব্লগকে শিল্পে পরিণত করতে পারব।"

অনুষ্ঠানে 'নাগরিক সাংবাদিক সম্মাননা পুরস্কার' দেওয়া হয় যে ১০ জন ব্লগারকে, তারা হলেন- মোত্তালিব দরবারি, বাসন্ত বিষু, ম. সাহিদ, নিঝুম মজুমদার, ফিউচারিস্ট, ইলিয়াস চৌধুরী, নাহুয়াল মিথ, মামুন ম. আজিজ, আবু সুফিয়ান ও প্রবীর বিধান।

'বিশেষ পুরস্কার'প্রাপ্তরা হলে প্রদান করা হয়। তারা হলেন- ম. হাশেম (সবচেয়ে বেশি পোস্টদাতা), নাহুয়াল মিথ (সবচেয়ে বেশি মন্তব্যদাতা), ইলিয়াস চৌধুরী (সবচেয়ে বেশি ফটো পোস্টদাতা)।

২০১১ সালের ১১ ফেব্র"য়ারি একুশের বইমেলার লিটিল ম্যাগ চত্বরে অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী বেষ্টিত হয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ ঘটে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ব্লগের।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএসটি/এমআই/২১৩৩ ঘ.