বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়: হাসিনা

বিডিনিউজ২৪
Published : 23 Feb 2012, 04:37 PM
Updated : 23 Feb 2012, 04:37 PM

ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের পক্ষে কারো শয়ন কক্ষ পাহারা দেওয়া সম্ভবপর নয়।

বৃহস্পতিবার গণভবনে সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কর্মসূচির সমালোচনাও করেন।

এর পাশাপাশি সাংবাদিক দম্পতির বেঁচে যাওয়া পাঁচ বছর বয়সি সন্তান মাহিন সরওয়ার মেঘের কাছে ঘটনা জানতে চেয়ে কিছু সাংবাদিকের তৎরপরতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসার শয়নকক্ষে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক সাগর এবং এটিএন বাংলার রুনি।

১০ দিনেই হত্যাকারীদের চিহ্নিত কিংবা গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার সমালোচনা করে বুধবার ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ করেছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো, যাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠনও রয়েছে।

বিভক্ত সাংবাদিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন পর এক সঙ্গে সমাবেশ করে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি এক ঘণ্টা কর্মবিরতি এবং ১ মার্চ অনশনের কর্মসূচি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সাংবাদিকরা এখন সকলে মিলে আন্দোলন করছেন। কিন্তু, সরকারের পক্ষে তো কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়।"

সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের পদত্যাগ চেয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর তদন্ত করছেন।

সাংবাদিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, "মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু হত্যাকাণ্ডের পর যদি সাংবাদিকরা এভাবে নামত, তাহলে হয়তো আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তাই সকলে মিলে নামেনি। আমরা ক্ষমতায় তাই সকলে মিলে নেমেছে।"

"গণমাধ্যম এখন মুক্ত-স্বাধীন। স্বাধীনভাবে অনেক কথা লিখছে। আবার, অনেক অসত্য তথ্যও পরিবেশন করছে," যোগ করেন তিনি।

সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডস্থলে আলামত নষ্টের জন্য সবার অসচেতনতাকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যেখানে সাগর-রুনি খুন হয়েছিল। সেখানে এত বেশি লোক গিয়েছিল যে অনেক আলামতই নষ্ট হয়ে গেছে। পা দিয়ে মাড়িয়ে আলামত নষ্ট করে দিয়েছে।"

"এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ আগে যাবেন না। ঘরে ঢুকে আলামত নষ্ট করবেন না," পরামর্শ দেন তিনি।

তদন্তে সহায়তা এবং কোনো তথ্য জানা থাকলে তা তদন্তকারীদের দিতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শিশু মেঘের কাছে ঘটনা জানতে চেয়ে কিছু সাংবাদিকের পীড়াপীড়ির সমালোচনা করে তিনি বলেন, "বাচ্চাটাকে সংবাদিকরা যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তা ঠিক হয়নি। সাংবাদিকদের কাজ জিজ্ঞাসাবাদ নয়। জিজ্ঞাসাবাদ গোয়েন্দাদের কাজ।"

"আপনারা এটা কীভাবে পারলেন? বাবা-মা মারা গেছে, তার ইন্টারভিউ করতে? দয়া করে শিশুটাকে রেহাই দিন," সাংবাদিকদের প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বান।

তিনি আরো বলেন, জীবিতের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় খুনিরা আড়ালে চলে গেছে।

সিলেটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিরোধী দলের সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে আন্দোলনের নামে জনগণকে কষ্ট দেবেন না। লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চেষ্টা করলে জনগণ তা মেনে নেবে না।"

সংসদে কথা বলতে দেওয়া হয় না- বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের এই অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, "নবম জাতীয় সংসদে খালেদা জিয়া সর্বসাকুল্যে পাঁচ-ছয় দিন সংসদে এসেছেন। এর মধ্যে চার দিন বক্তৃতা দিয়েছেন। একেকটা এক ঘণ্টার কম নয়, সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।"

সভায় সিলেটের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/এমআই/১৭১৫ ঘ.