‘প্রয়োজনে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়া হবে’

বিডিনিউজ২৪
Published : 22 Feb 2011, 03:11 PM
Updated : 22 Feb 2011, 03:11 PM

ঢাকা, ফেব্র"য়ারি ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- লিবিয়ায় কোনো বাংলাদেশি নাগরিক জিম্মি হওয়ার খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তবে প্রয়োজনে সেখান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "লিবিয়া থেকে আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, সেখানে কোনো বাংলাদেশিকে জিম্মি করা বা কেনো হতাহতের তথ্য তাদের কাছে নেই।"

তবে যেহেতু বিক্ষোভ ও সহিংসতার কারণে লিবিয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং যেহেতু এ বিষয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে, সেহেতু প্রয়োজনে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সচিব বলেন, "আমরা এরইমধ্যে লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। রাষ্ট্রদূত (এ বি এম নুরুজ্জামান) আমাদের জানিয়েছেন, লিবিয়ায় এখনো যোগাযোগ রাখা বা চলাফেরা করা যাচ্ছে।"

লিবিয়ার সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা গত কয়েকদিনে শতাধিক বাংলাদেশিসহ তিনশরও বেশি বিদেশিকে জিম্মি করেছে বলে সোমবার খবর পাওয়া যায়। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজি থেকে প্রায় ৩৫০ কিলো মিটার পূর্বে দারনা সিটিতে তাদের আটক রাখা হয়েছে বলে জিম্মি থাকা এক বাংলাদেশি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

বাংলাদেশি ওই নাগরিক শফিউদ্দিন বিশ্বাসের ভাই জিন্নাত আলী বিশ্বাস মঙ্গলবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা যতোটা জানতে পেরেছি, অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। আজ তাদের কেবল একটি করে রুটি খেতে দেওয়া হয়েছে।"

এর আগে শফিউদ্দিন বিশ্বাস সোমবার দুপুরে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গত শুক্রবার বিকালে ৩০/৪০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি আমাদের ক্যাম্প অফিস থেকে জিম্মি করে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদে নিয়ে যায়। পরের দিন স্থান পরিবর্তন করে পাশের দুটি কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের আনা হয়েছে।"

লিবিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক জিম্মি হওয়ার খবর নিয়ে সরকারের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না পাওয়ায় সোমবার এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার পর তা আরো প্রকট হয়ে ওঠে।

দুপুরে খন্দকার মোশাররফ তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সরকার জিম্মিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, তারা ভালো আছে।

এর কিছুক্ষণ আগে দীপু মনি তার কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশি জিম্মি হওয়ার কোনো খবর তার মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই।

এই পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস বলেন, বিক্ষোভ-সহিংসতার কারণে লিবিয়ায় যোগাযোগ কঠিন কঠিন হয়ে উঠেছে। রাজধানী ত্রিপোলীতে কারফিউ চলছে। ফলে দিনের বেলা ছাড়া অন্য সময় বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না দূতাবাস। এতে করে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কোনটি সঠিক সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।

সচিব বলেন, "সেখানে যারা আছেন, তাদের নিরাপত্তাই এখন আমাদের প্রথম চিন্তা। প্রয়োজনে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।"

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু বেনগাজিতেই রয়েছে প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশি।

অবশ্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজার।

রাজনৈতিক সংস্কার ও সরকার পরিবর্তনের দাবিতে লিবিয়ায় গত বুধবার থেকে বিক্ষোভ চলছে। রাজধানী ত্রিপোলিসহ দেশের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় মুয়াম্মার গাদ্দাফির সরকার তা কঠোরভাবে দমন করছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বিক্ষোভ শুরুর পর এ পর্যন্ত সহিংসতায় আড়াইশোর বেশি লোক নিহত হয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত লিবীয় রাষ্ট্রদূত আহমেদ আতিয়া হামাদ আল-ইমানসহ বিভিন্ন দেশে লিবীয় কূটনীতিকরা এর প্রতিবাদে পদত্যাগ বা সরকারের পক্ষত্যাগ করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/জেকে/২০০৩ ঘ.