বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত খননের পক্ষে খনি কর্তৃপক্ষ

বিডিনিউজ২৪
Published : 5 March 2012, 02:35 PM
Updated : 5 March 2012, 02:35 PM

আমিনূর রহমান রাসেল
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদক

ঢাকা, মার্চ ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- কয়লা খনির উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে চায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)।

পেট্রোবাংলাকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবও দিয়েছে খনিটির মূল অংশে বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনরত পেট্রোবাংলার কোম্পানি বিসিএমসিএল।

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি, পানি ব্যবস্থাপনা, আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত এবং পুর্নবাসন বিষয়ে মত দিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে সরকার।

ওই কমিটির সদস্য সচিব ও বিসিএমসিএল'র এমডি মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রোববার বলেন, "বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে একটি প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে দাখিলের পর সে অনুযায়ী ফিজিবিলিটি সমীক্ষা (টেকনো-ইকোনমিকাল স্টাডি) করার সিদ্ধান্ত হয়।"

ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারের অনুমোদিত ছকে একটি স্টাডি/সার্ভে প্রপোজাল প্রণয়ন করে কোম্পানির ১৫৯তম পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর তা পেট্রোবাংলার বোর্ডে উপস্থাপনের জন্য গত ২০১১ সালের জুনে পাঠানো হয়।

তবে কোনো খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের বিরোধিতা করে বিগত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

তাদের বক্তব্য, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে আবাদি জমি নষ্টের পাশাপাশি জনবসতি ধ্বংস হবে। সেই সঙ্গে বিদেশে এ কয়লা পাচারের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এদেশের জনগণ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে দেবে না। ২০০৬ সালে ফুলবাড়িতে যেমন রুখে দিয়েছিল, বড়পুকুরিয়ায় তেমন উদ্যোগ নিলেও তা হবে।"

বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) এ পর্যন্ত পাঁচটি কয়লা খনি আবিষ্কার করেছে। এসব খনিতে কয়লার সম্ভাব্য মজুদ প্রায় তিন হাজার ৩০০ মিলিয়ন টন বলে ধারণা করা হয়।

খনি পাঁচটি হলো- দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী, দীঘিপাড়া জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ এবং রংপুরের খালসপীর।

এর মধ্যে বড়পুকুরিয়ায় ৩৯০ মিলিয়ন টন, ফুলবাড়ীতে ৫৭২ মিলিয়ন টন, দীঘিপাড়ায় ৬০০ মিলিয়ন টন, জামালগঞ্জে এক হাজার ৫৩ মিলিয়ন টন এবং খালসপীরে ৬৮৫ মিলিয়ন টন।

বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে দৈনিক প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। যার অধিকাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানকার তাপভিত্তিক ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

২০০৫ সাল থেকে এ খনিতে কয়লা উত্তোলন শুরুর পর বিগত ছয় বছরে ৪২ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে খনির মূল অংশ থেকে প্রথম স্তরের (স্লাইস) কয়লা উত্তোলন শেষে বর্তমানে এ খনির রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। এ কাজ শেষে আগামী ১৬ মার্চ থেকে নতুন পদ্ধতিতে (লংওয়াল টপ কোল কেভিং) দ্বিতীয় স্তরের কয়লা উত্তোলন শুরু হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এআরআর/পিডি/১৮৪৪ ঘ.