গুলতেকিন খানের সাক্ষাৎকার: কবিতার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিল

রাজু আলাউদ্দিন
Published : 4 Feb 2016, 05:23 PM
Updated : 4 Feb 2016, 05:23 PM

বাংলা গল্প-উপন্যাসের পাঠকদের অনেকেই তাকে চেনেন। ছড়া লেখার অভ্যাস থাকলেও কবিতায় তার সৃষ্টিশীল হাতের পরিচয় ঘটেছে এই প্রথম। বাঙালি মুসলমান লেখকদের মধ্যে সুনাম কুড়ানো লেখক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁয়ের নাতনী পরিচয় ছাপিয়ে পাঠক তাকে চিনতো প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমদের সাবেক স্ত্রী হিসেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক এই শিক্ষার্থীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ আজও, কেউ হাঁটে অবিরাম প্রকাশের অনুভূতিসহ আরও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক রাজু আলাউদ্দিনের সাথে। বি. স.

রাজু আলাউদ্দিন: প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন আপনার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বইয়ের জন্য। আমার ভাল লাগছে যে আপনি লেখক-পরিবার ভুক্ত হলেন, অর্থাৎ লেখকদের একজন হলেন। যদিও আপনি লেখালেখির পরিমন্ডলের মধ্যেই ছিলেন। তো কেমন লাগছে, আপনার প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি যদি একটু বলেন।
গুলতেকিন খান: আসলে আমি লেখালেখি অনেক ছোটবেলা থেকেই করছি। সব সময়ই করে আসছি। আমার দাদা প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ, ওখান থেকেই আমার লেখালেখির হাতেখড়ি হয়েছে। আমি লেখালেখির মধ্যেই আছি। এবার বই আকারে প্রকাশিত হলো। তাছাড়া আমি লেখালেখিই করে এসেছি। বই আকারে দেখতে তো ভাল লাগেই।
রাজু আলাউদ্দিন: আপনি বলছিলেন যে আপনার লেখালেখি অনেক ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু প্রকাশ হলো, বা গ্রন্থাকারে প্রকাশ হলো অনেক দেরিতে। প্রকাশের ব্যাপারে এত সময় নিলেন কী ভেবে? একটু বলবেন কি?
গুলতেকিন খান: আমার লেখা প্রকাশিত হতো দৈনিক পত্রিকায়। দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ, ইত্তেফাকে প্রকাশিত হতো। তারপর নানা কারণে আমার লেখা কিছুদিন বন্ধ ছিল। আমি পড়াশুনা করেছি। মাঝখানে মাঝখানে টুকটাক লিখেছি। হঠাৎ মনে হলো হোয়াই নট। ভাবলাম একটা বই প্রকাশ করি।
রাজু আলাউদ্দিন: আপনি বলছিলেন ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি, তখন কি আপনি কবিতাই লিখেছেন নাকি সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমেও কাজ করেছেন?
গুলতেকিন খান: কবিতাই লিখতাম। কবিতার প্রতি আমার বিশেষ অাগ্রহ ছিল। আসলে কবিতা ঠিক না, ছড়া লিখতাম। মূলত ছড়াই লিখতাম।
রাজু আলাউদ্দিন: হ্যাঁ, ছড়া যদি কাব্যগুণসম্পন্ন হয়, তখন তো সেটা কবিতাই হয়ে যায়। যেমন সুকুমার রায়–তিনি যতটা না ছড়াকার, তারচেয়ে বেশি কবি। তাই না?
গুলতেকিন খান: অবশ্যই, অবশ্যই।
রাজু আলাউদ্দিন: এই অর্থে আপনি ছড়া লিখলেও আসলে কবিই ছিলেন। আপনার ঐ ছড়াগুলো নিয়ে গ্রন্থাকারে তো কোনো বই বের হয়নি।
গুলতেকিন খান: জী না, জী না, সেগুলো শুধু পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে।
রাজু আলাউদ্দিন: গ্রন্থাকারে প্রকাশ করার মতো সেই পরিমাণ নেই, নাকি ছড়াগুলো সবই হারিয়ে ফেলেছেন? কোনটা বলতে চাচ্ছেন?
গুলতেকিন খান: মোটামুটি সবই হারিয়ে ফেলেছি। কারণ সেগুলো অনেক আগের। তাছাড়া দীর্ঘদিন আমি দেশের বাইরে ছিলাম, তখন ঐ পত্রিকাগুলো আর খুঁজে পাইনি। তবে অন্যান্য কিছু লেখালেখি করেছি, বাট ওই ছড়াগুলো আর আমার কাছে নেই।
রাজু আলাউদ্দিন: আমি যদ্দুর জানি আপনার নানা প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ, নানা বোধহয়, নাকি দাদা?
গুলতেকিন খান: আমার দাদা।
রাজু আলাউদ্দিন: তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন লেখক। তারপরে আপনি লিখছেন– এটা এক ধরনের বিদ্যাচর্চা এবং সৃজশীলতার একটা ধারা আপনি বহন করছেন বা বহন করে এসছিলেন, এবার তার প্রকাশ ঘটলো এই মেলায়। তো আপনি কি সাহিত্যের অন্য কোনো মাধ্যমেও আগ্রহ বোধ করবেন ভবিষ্যতে?
গুলতেকিন খান: এখন ঠিক বুঝতে পারছি না। দেখি কী হয়, ঠিক আছে?
রাজু আলাউদ্দিন: তাহলে কবিতাতেই আপনার আগ্রহ এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীভূত?
গুলতেকিন খান: জী।
রাজু আলাউদ্দিন: আপনার এই কবিতাগুলো সম্পর্কে কিছু বলবেন আমাদেরকে?
গুলতেকিন খান: মানে কী ধরনের, কী বলবো, বুঝতে পারছি না।
রাজু আলাউদ্দিন: মানে কবিতাগুলোর লেখার মুহূর্ত, কোনো স্মরণীয় মুহূর্ত বা যদি এরকম প্রশ্ন করা হয়: কেন কবিতা লেখার তাগিদ বোধ করলেন?
গুলতেকিন খান: আমি আসলে … আগেই বলেছিলাম যে আমি ছড়া লিখতাম। তখন থেকেই কবিতার বই পড়তে অগ্রহী ছিলাম, পরে আমি যখন ইংরেজি সাহিত্যে পড়েছি, তখনও আমি কবিতা লিখেছি। কবিতায় আমি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
রাজু আলাউদ্দিন: আপনি ইংরেজির ছাত্রী ছিলেন, সে ক্ষেত্রে আপনার প্রিয় লেখকদের কথা একটু বলবেন, বা প্রিয় লেখক কারা–দেশে এবং বিদেশে?
গুলতেকিন খান: প্রিয় লেখক …. আপনি কি কবিতার ক্ষেত্রে জানতে চাচ্ছেন?
রাজু আলাউদ্দিন: হ্যাঁ, কবিতার ক্ষেত্রে বলতে পারেন।
গুলতেকিন খান: কবিতার ক্ষেত্রে ডব্লিউ বি ইয়েটস, টি এস এলিয়ট, ডব্লিউ এইচ অডেন–তাদের কবিতা আমার খুব ভালো লাগে। আর দেশের মধ্যে শামসুর রহমান, সৈয়দ শামসুল হক, তারপর বিনয় মজুমদার–এদের কবিতা আমার বেশি ভালো লাগে। জয় গোস্বামীর কবিতা আমার ভালো লাগে।
রাজু আলাউদ্দিন: আরও যারা তরুণ কবি আছেন এদের কারও কথা মনে পড়ে আপনার, ভালো লাগে কি?
গুলতেকিন খান: আসলে তেমন পড়া হয় না, নতুন, তরুণদের অনেকের কবিতা আমার পড়া হয়নি।
রাজু আলাউদ্দিন: আচ্ছা আচ্ছা। আপনার কাব্যিক মনোগঠনের পেছনে এমন কি কেউ আছেন যিনি আপনাকে প্রভাবিত বা অনুপ্রাণিত করেছেন?
গুলতেকিন খান: সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমার বন্ধুরা, ছেলেমেয়েরা, আত্মীয়স্বজন, সবাই করে। তবে মূল অনুপ্রেরণা ছিল আমার দাদার অবশ্যই।
রাজু আলাউদ্দিন: অনেক ধন্যবাদ আপা আমাকে সময় দিলেন বলে, কৃতজ্ঞতা জানাই।
গুলতেকিন খান: থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।

ইতিপূর্বে আর্টস-এ প্রকাশিত রাজু আলাউদ্দিন কর্তৃক গ্রহীত ও অনূদিত অন্যান্য সাক্ষাৎকার:
দিলীপ কুমার বসুর সাক্ষাৎকার: ভারতবর্ষের ইউনিটিটা অনেক জোর করে বানানো