কাবুলে তালেবান হামলার অবসান

বিডিনিউজ২৪
Published : 16 April 2012, 05:18 AM
Updated : 16 April 2012, 05:18 AM

কাবুল, এপ্রিল ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পর কাবুলে তালেবান হামলার অবসান হয়েছে। সোমবার আফগান সরকার দাবি করেছে, সারারাত ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর কাবুলে তালেবানের সঙ্গে সব লড়াই শেষ হয়েছে।

অবশ্য পার্লামেন্ট ভবনের আশপাশে লড়াই আবার চাঙ্গা হয়েছে বলে আফগান গণমাধ্যমগুলো দাবি করে।

আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাদেক সিদ্দিকি বলেন, "কাবুলের সব জায়গায় লড়াই শেষ হয়েছে এবং আর কোথাও লড়াই চলছে না।"

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত সবকিছু জানানো হবে বলে জানান তিনি।

রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনসহ কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস এবং ন্যাটো দপ্তরে একযোগে হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা।

বিবিসির কাবুল প্রতিনিধি বিলাল সারোয়ারি জানিয়েছেন, সারারাত লড়াই চলার পর আফগান বাহিনীগুলো কাবুলের অবশিষ্ট এলাকা থেকে সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধাদের হটাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি নির্মাণাধীন ভবনকে ঘাঁটি হিসেবে তালেবান বিদ্রোহীরা ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলায় রকেট চালিত গ্রেনেডসহ ভারী মেশিনগান ব্যবহার করছে বিদ্রোহী জঙ্গিরা।

আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লড়াইয়ে অন্তত ১৭ তালেবান বিদ্রোহী ও এক আফগান পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

জঙ্গিদের হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ, জার্মান দূতাবাস ও আফগানিস্তানে নিয়োজিত ন্যাটো বাহিনীর সদরদপ্তর। ব্রিটিশ, রুশ, জার্মান এবং মার্কিন দূতাবাস এলাকায় হামলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া হামলাকারীরা লোগার, পাকতিয়া ও রানগারহার প্রদেশেও হামলা চালিয়েছে।

গত ছয়মাসের মধ্যে কাবুলে এটি প্রথম বড় ধরনের জঙ্গি হামলা। একযোগে কাবুলে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসগুলো, ন্যাটোর সদরদপ্তর ও পার্লামেন্ট ভবনে রকেট চালিত গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হামলা শুরু হয়।

সব হামলার দায় স্বীকার করে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্ল¬াহ মুজাহিদ বলেছেন, "এটা বসন্তকালীন হামলার শুরু। গত কয়েকমাস ধরে এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছি আমরা। তালেবান দুর্বল হয়ে গেছে বলে ন্যাটো যে দাবি করেছে এ হামলা তারই জবাব। "

তিনি জানান, দুটি প্রদেশে একযোগে হামলা শুরু করে তালেবান যোদ্ধারা। তারা কূটনৈতিক পাড়ার বিভিন্ন দূতাবাস, ন্যাটোর দপ্তর এবং রাজধানীর পশ্চিমে পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করেছে।

তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন এমপি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বলেও জানা গেছে।

কান্দাহারের পার্লামেন্ট সদস্য নাঈম হামিদজাই লালাই রয়টার্সকে বলেন, "আমি জনগণের প্রতিনিধি এবং আমাকে তাদের রক্ষা করতে হবে।"

এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসি'কে জানিয়েছেন, লোগার প্রদেশে তিন আত্মঘাতী হামলাকারী নিহত হয়েছে এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াইয়ে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ সদস্য আহত হয়েছে।

জালালাবাদ প্রদেশেও আত্মঘাতী হামলার খবর পাওয়া গেছে। আত্মঘাতী হামলাকারীরা জালালবাদের মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
লোগার, পাকতিয়া এবং নানগারহারে ১০ জনেরও বেশি আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তালেবানের এক মুখপাত্র।
লোগারের রাজধানী পুল এ আলম এর একটি সরকারি ভবন দখল করেছে জঙ্গিরা ও সেখানে দু'পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পাকতিয়ার রাজধানী গারদেজেও একটি ভবন দখল করেছে জঙ্গিরা।
রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কাবুলে ব্রিটিশ কূটনীতিকদের ব্যবহৃত একটি বাড়িতে রকেট চালিত গ্রেনেড হামলা হয়েছে। কাবুলে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের নিরাপত্তা টাওয়ারেও দুটি রকেট হামলা হয়েছে। রকেট হামলার খবর পাওয়া গেছে রাশিয়ার দূতাবাসেও।

এছাড়া জার্মানির দূতাবাসের দিক থেকেও ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। তবে এ বিষয়ে দূতাবাস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মার্কিন দূতাবাসের কাছে রোববার হামলার খবর নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী হতাহত হয়নি বলে দূতবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মোবাইল ফোন থেকে এক লিখিত বার্তায় মার্কিন দূতাবাস জানায়, "যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের চারপাশের এলাকায় হামলা চলছে। এ এলাকা এড়িয়ে চলুন। কোথাও আশ্রয় নিন।"

বিবৃতিতে জানানো হয়, "দূতবাস নিশ্চল হয়ে আছে এবং সব কর্মীদের নিরাপদে থাকার জন্য বলা হচ্ছে।"

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাকতিয়ায় পুলিশ প্রধানের কম্পাউন্ডের কাছে একটি ৪তলা ভবন জঙ্গিরা দখল করেছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। ভবনটি জঙ্গি মুক্ত করতে হেলিকপ্টার গানশিপের সাহায্যে হামলা শুরু করেছে ন্যাটো বাহিনী।

কাবুলের পূর্বাঞ্চলে একটি ফরাসি কনভয় এবং গ্রিক সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে এক প্রত্যক্ষদর্শী। ফরাসি ও গ্রিক সেনারা তালেবানদের হামলার জবাব দিয়েছে মেশিনগানের গুলি ছুঁড়ে।

আফগান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে, দেশজুড়ে হামলার ঘটনায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তালেবানের অন্যতম র্দুর্ধষ উপদল হাক্কানি নেটওয়ার্ক।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমডি/এলকিউ/এবি/সিআর/০৯৫৯ ঘ.