সময়ের সঙ্গে প্রকট হচ্ছে ধ্বংসের চিত্র

বিডিনিউজ২৪
Published : 12 March 2011, 05:49 AM
Updated : 12 March 2011, 05:49 AM

টোকিও, মার্চ ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- দেড়শ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জাপানে। ভূকম্পন আর সুনামিতে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। পরমাণু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তেজস্ক্রিয়তার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোথাও আগুন জ্বলছে, কোনো শহর এখনো রয়েছে পানির নিচে। পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।

শুক্রবার দুপুরে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপরই ১০ মিটার উচ্চতার সুনামিতে ভেসে যায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ দেশের উত্তর-পূর্ব উপকূল। ভূমিকম্প ও সুনামির ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে জাপানের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়।

শনিবার দিনের আলো ফুটতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংসের চিত্র প্রকাশ হতে শুরু করে। জাপানের সংবাদ সংস্থা 'কিয়োদো' ভূমিকম্প ও সুনামিতে নিহতের সংখ্যা অন্তত ১৩০০ বলে জানিয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো অনেকে। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর কয়েকটি পরাঘাতে পুনরায় কেঁপে ওঠে জাপান। এতে মানুষের মধ্যে আবার আতঙ্ক দেখা দেয়।

সুনামির সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসে উপকূলীয় নগরী সেন্দাইয়ে, যেখানে ১০ লাখ লোকের বাস। জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকের স¤প্রচারে দেখা যায়, সাগর থেকে উঠে আসা বিশাল ঢেউ ভাসিয়ে নিচ্ছে গাড়ি, জাহাজ, ঘর-বাড়ি।

কিয়োদো নিউজ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর সেন্দাইয়ের বিমানবন্দরে আগুন ধরে গেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এনএইচকে টেলিভিশনের এক সাংবাদিক জানান, সেন্দাই শহরের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেকে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়ে উদ্ধারের অপেক্ষায় রয়েছে। পানির

সংবাদ সংস্থা জিজি নিউজ জানিয়েছে, উত্তর উপকূলের প্রায় পৌনে ১ লাখ লোকের শহর কেসেনুমার এক-তৃতীয়াংশ এলাকা রয়েছে পানির নিচে। শহরবাসীর অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে পাড়ি জমিয়েছে।

রাজধানী টোকিও-ও ভূমিকম্পের আঘাত থেকে রক্ষা পায়নি। ভূমিকম্পের পরপরই সেখানে গণপরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাতাল রেলপথ শনিবার খুলে দেওয়া হলেও পরাঘাতের কারণে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।

একটি স্টেশনে অপেক্ষমান এক নারী রয়টার্সকে বলেন, "যেভাবে কম্পন হচ্ছে, তাতে আমার দাঁড়িয়ে থাকাই দায়।"

ভূমিকম্পের পরপরই সব সমুদ্রবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়, বন্ধ রয়েছে অনেকগুলো বিমানবন্দরও। গাড়ির তৈরির কারখানাগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কিয়োদো বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, অন্তত ১০০ আরোহীসহ একটি জাহাজ সুনামিতে ভেসে গেছে। একটি ট্রেনের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

ভূমিকম্প সবচেয়ে বড় শঙ্কা তৈরি করেছে তেজষ্ক্রিয়তার। টোকিও থেকে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার দূরের ফুকোশিমা পরমাণু স্থাপনা থেকে সামান্য মাত্রায় তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান ওই স্থাপনার চার দিকের ১০ কিলোমিটার এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

জাপানের এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এগিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, তার দেশ সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রতিবেশী দেশ চীন বলেছে, তারাও তৈরি আছে। জাপান বললেই সাড়া দেবে তারা।

ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জাপান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শিলা স্মিথ বলেন, "জাপানের এ দুর্যোগ মোকাবেলায় নজিরবিহীন মানবিক ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে হবে।"

প্রধানমন্ত্রী কান শুক্রবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "ভূমিকম্পে জাপানের বিশাল এলাকা জুড়ে বিশেষ করে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে।"

যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দুইটা ৪৬ মিনিটে শুরু হয়ে পরপর কয়েকবারের ভূমিকম্পে কেঁেপ ওঠে রাজধানী টোকিও। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিলো টোকিওর ২৫০ মাইল দূরে ভূ-পৃষ্ঠের ২০ মাইল গভীরে।

ভূমিকম্পের পরপরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী ফিলিপিনস, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়াসহ মোট ৫৩টি দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। বেশ কিছু এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয় অধিবাসীদের।

জাপানে এর আগে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিলো ১৯২৩ সালে, ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলো ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ।

১৯৯৫ সালে কোবে নগরীতে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয় ১০ হাজার কোটি ডলার। ২০০৪ সালে প্রলয়ঙ্করী সুনামিতে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য ছিলো ১ হাজার কোটি ডলার।

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামিতে অন্তত ১৪টি দেশের ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআই/১০৪০ ঘ.